ডায়াবেটিস কি - দ্রুত ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করার উপায়

আপনারা ডায়াবেটিস কি - দ্রুত ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করার উপায় সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন,তাহলে আজকের আর্টিকেলে ডায়াবেটিস কি,ডায়াবেটিস হলে কি কি সমস্যা হয় ইত্যাদি সম্পর্কে ডায়াবেটিস কি - দ্রুত ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করার উপায় আর্টিকেলের মাধ্যমে জানবো। এবার চলুন,ডায়াবেটিস কি - দ্রুত ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করার উপায় আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনাদেরকে বিস্তারিত তুলে ধরার চেষ্টা করবো।
ডায়াবেটিস কি - দ্রুত ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করার উপায়
বর্তমানে বিশ্বব্যাপী ডায়াবেটিসের হার দিন দিন বেড়েই চলেছে। প্রায় প্রতিটা পরিবারেই ডায়াবেটিকস আক্রান্ত রোগী দেখা যায়। এজন্য ডায়াবেটিস সম্পর্কে কম বেশি আমাদের প্রত্যেককে সঠিক ধারণা থাকতে হবে।

ডায়াবেটিস কত ধরনের

ডায়াবেটিস আমাদের খুব পরিচিত একটি হরমোন জনিত রোগ। যা আমাদের পরিবারের মধ্যে কারো না কারো ডায়াবেটিস হয়ে থাকে। নিচে আমরা ডায়াবেটিস কত ধরনের হয়ে থাকে তা সম্পর্কে তুলে ধরবো।
ডায়াবেটিস প্রধানত দুই প্রকার।
  • টাইপ -১ ডায়াবেটিস
  • টাইপ -২ ডায়াবেটিস
টাইপ -১ ডায়াবেটিসঃ টাইপ -১ ডায়াবেটিস সাধারণত শিশু,কিশোর,কিংবা তরুণদের মধ্যে বেশি দেখা দেয়। টাইপ -১ ডায়াবেটিস জেনেটিক এর কারণে হয়ে থাকে। HLADR ৩ এবং HLADR ৪ নামক দুটি জিনের কারণে হয়ে থাকে। টাইপ -১ ডায়াবেটিস হলে শরীরের মধ্যে ইনসুলিন উৎপাদন হওয়া বন্ধ হয়ে যায়। তখন বাইরে থেকে শরীরে ইনসুলিন দিতে হয়। তাছাড়া রক্তে গ্লকোজ এর মাত্রা বেড়ে গেলে রোগী মারা যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। টাইপ -১ এর উপসর্গগুলো হলো;
  • পেট ব্যথা
  • বমি বমি ভাব
  • ওজন হ্রাস
  • চোখের দৃষ্টির সমস্যা
  • ঘন ঘন প্রসাবের প্রবণতা
  • দুর্বলতা ও ক্লান্তি অনুভব করা
টাইপ -২ ডায়াবেটিসঃ পৃথিবীতে টাইপ -২ ডায়াবেটিস এ আক্রান্তর সংখ্যা ৯০-৯৫%। টাইপ-২ ডায়াবেটিস সাধারণত ৪০ ঊর্ধ্ব বয়সের পর হয়ে থাকে। টাইপ -২ ডায়াবেটিস হলে শরীরে ইনসুলিন উৎপন্ন হয় কিন্তু ইনসুলিন সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারেনা। টাইপ -২ ডায়াবেটিস হওয়ার মূল কারণ হলো অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধি এবং শারীরিক পরিশ্রম না করা। টাইপ -২ এর উপসর্গ গুলো হলো;
  • তীব্র তৃষ্ণা
  • হাত-পা ঝি ঝি করা
  • মূত্রনালীতে সংক্রমণ
  • মাথা ঘোরা
  • মাথা ব্যথা
  • দ্রুত ওজন কমে যাওয়া
  • চুলকানি হওয়া
  • চোখের সমস্যা এবং
  • মেজাজ পরিবর্তন হওয়া

ডায়াবেটিস কত হলে স্বাভাবিক

ডায়াবেটিস বর্তমানে আমাদের প্রাপ্তবয়স্কদের পাশাপাশি তরুণদের মধ্যে লক্ষ্য করা যায়। তবে এই ডাইবেটিস পরীক্ষা করা অনেক ঝামেলা। কারণ ডায়াবেটিস পরীক্ষা করার জন্য সকালে খালি পেটে রক্তে গ্লকোজ পরীক্ষা করতে হয়। এছাড়া ৮ ঘণ্টা না খেয়ে রক্তের নমুনা দিতে হয়। এবং পরপর দুইবার রক্ত দিতে হয়।এর মধ্যে মাঝখানে অন্তত দুই ঘন্টা বিশ্রাম নিতে হয়। তবে বিজ্ঞানীরা ডায়াবেটিস পরীক্ষা করার জন্য আরো কোন সহজ পদ্ধতি খুঁজে বের করার চেষ্টা করেন। এজন্য বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে ডায়াবেটিস সনাক্ত করার জন্য HBA১ নামক পরীক্ষা করুন।
এই পরীক্ষা করার জন্য রক্তের নমুনা একবারই দিতে হয় আর যাদের রক্ত দিতে ভয় হয় তাদের জন্য খুব সুবিধা। এছাড়াও আরো সুবিধা আছে তা হলো দিনের মধ্যে যেকোনো সময় পরীক্ষা করা যায়।তাহলে এবার চলুন ডায়াবেটিস কি - দ্রুত ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করার উপায় আর্টিকেলে ডায়াবেটিস কত হলে স্বাভাবিক এই প্যারার মাধ্যমে তা আমরা জেনে নেই।আমেরিকান ডায়াবেটিক অ্যাসোসিয়েশনের গাইডলাইন অনুসারে HBA১C এর মান ৫.৭ এর নিচে থাকলে স্বাভাবিক ধরা যায়।

ডায়াবেটিস হলে কি কি সমস্যা হয়

ডায়াবেটিস হলে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে বিভিন্ন রকমের স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দেয়। তাহলে এবার চলুন ডায়াবেটিস হলে কি কি সমস্যা হয় পড়ে ফেলি। মূলত ডায়াবেটিস নিউরোলজিক্যাল সমস্যাকে ২ ভাবে ভাগ করা হয়। তা হলো;
  • পেরিফেরাল নিউরোপ্যাথি
  • অটোনমিক নিউরোপ্যাথি
পেরিফেরাল নিউরোপ্যাথি হলে হাতে - পায়ে যে যে সমস্যা দেখা দিতে পারে তা হলো;
  • হাত - পায়ে ঝি ঝি ধরা
  • জ্বালাপোড়া করা
  • ব্যথা করা
  • হাঁটার পথে পায়ের তলায় সেনসেশন হচ্ছে অনুভব করা।
অটোনমিক নিউরোপ্যাথি হলে অঙ্গ পতঙ্গের যে সমস্যা হয়ে থাকে।
  • রক্তচাপ কমে যাবে
  • চোখের সমস্যা দেখা দিবে
  • মাথা ঘুরবে
  • যৌন ক্ষমতা কমে যাবে
  • প্রসাব এবং মলত্যাগে সমস্যা হয়
  • ত্বক শুষ্ক হয়ে যাবে
  • হৃদপিন্ডের গতি বৃদ্ধি পাবে
  • পা ফেটে যাবে
  • হার্ট অ্যাটাক হতে পারে
  • কিডনির সমস্যা
  • মস্তিষ্কের সমস্যা
  • ক্যান্সার

ডায়াবেটিস কি - দ্রুত ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করার উপায়

বিশ্বব্যাপী ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। জাতীয় জনসংখ্যা গবেষণা ও প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান এর তথ্য মতে,বিশ্বে এবং বাংলাদেশসহ প্রতি ৭ সেকেন্ডে একজন মানুষ ডায়াবেটিস এ আক্রান্ত হচ্ছে। চিকিৎসকের মতে,যেসব পরিবারের বা বংশের মধ্যে পূর্বে ডায়াবেটিস ছিল পরবর্তীতে তাদের ছেলে-মেয়েদের মধ্যে ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। এছাড়াও যেসব শিশুর ওজন বেশি হয় এবং মায়ের গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস হয়েছিল সেসব শিশুদের ডায়াবেটিস আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।
বাংলাদেশে ডায়াবেটিস টাইপ -২ আক্রান্তের সংখ্যা ৯৫-৯৭ শতাংশ। ডায়াবেটিস টাইপ -২ এ কোন ব্যক্তি আক্রান্ত হলে রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণের জন্য কিছু পদ্ধতি মেনে চললে আপনারা নিজেই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারবেন।আজকে আমরা ডায়াবেটিস কি - দ্রুত ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করার উপায় আর্টিকেলের মাধ্যমে জানবো।
ডায়াবেটিস কিঃ ডায়াবেটিস বা বহুমূত্র রোগ হল গুরুতর দীর্ঘমেয়াদি ব্যধি। শরীরে যখন ইনসুলিন তৈরি করতে পারেনা বা তৈরি হওয়া ইনসুলিন ব্যবহার করতে পারেনা। তখন রক্তের গ্লকোজ এর মাত্রা স্বাভাবিক এর চেয়ে বেশি থাকে।
দ্রুত ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করার উপায়
আমরা নিজেরাই কিছু নিয়ম অনুসরণ করলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে পারবো। এবার চলুন দ্রুত ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করার উপায় সম্পর্কে জেনে নেই।
  • প্রতিদিন অথবা প্রতিবেলা নিয়ম করে নির্দিষ্ট সময় পেট খালি রেখে খাবার খেতে হবে।
  • অতিরিক্ত চর্বি জাতীয় খাবার গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
  • লাল আটার রুটি অথবা ঢেঁকি ছাটা চালের ভাত খেলে ভালো হয়।
  • প্রতিদিন পরিমাণ মতো ফলমূল ও শাকসবজি খেতে হবে।
  • পর্যাপ্ত পরিমাণে আর্সেনিকমুক্ত পানি পান করতে হবে।
  • ডায়াবেটিস রোগীদের প্রতিদিন কমপক্ষে ১ ঘন্টা করে হাঁটতে হবে।
  • নিয়মিত ব্যয়াম করতে হবে।
  • কাঁচা লবণ খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
  • ধূমপান ও অ্যালকোহল গ্রহণে বিরত থাকতে হবে।
  • এক জায়গায় বেশিক্ষণ বসে থাকা যাবে না

ডায়াবেটিস কত হলে মানুষ মারা যায়

আমাদের অনেকের মধ্যে ডায়াবেটিকস সম্পর্কে সঠিক ধারণা নেই। আমরা অনেকেই জানিনা ডায়াবেটিস এর মান কত হলে স্বাভাবিক আর কত হলে মৃত্যুর আশঙ্কা থাকে।আপনারা কি জানেন ২০১৯ সালে ডায়াবেটিকস এবং কিডনি রোগের কারণে আনুমানিক ২০ লক্ষ মানুষ মারা গেছে।বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য মতে, বিশ্বব্যাপী ডায়াবেটিস মহামারী আকারে বেড়ে গেছে। বলতে গেলে আমাদের প্রতিটা পরিবারের মধ্যেই ডায়াবেটিস রোগী পাওয়া যায়।

যার কারণে বিশ্বব্যাপী প্রতিবছর ১মিলিয়নের বেশি মানুষ ডায়াবেটিসে মৃত্যুর কোলে ঢেলে পড়ে।চিকিৎসা বিজ্ঞান এখনো নিশ্চিত ভাবে বলতে পারে নাই যে ডায়াবেটিস কত হলে মানুষ মারা যায়। তবে হ্যাঁ চিকিৎসকের মতে, ডায়াবেটিসের পরিমাণ অতিরিক্ত বেড়ে গেলে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ যেমনঃ কিডনি,হার্ট অ্যাটাক ইত্যাদির কারণে মানুষ মারা যেতে পারে। আমাদের ডায়াবেটিস থেকে মৃত্যুর ঝুঁকি কমাতে ডায়াবেটিস সম্পর্কে সঠিক ধারণা থাকতে হবে।

ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য তালিকা

আমাদের মধ্যে অনেকেই জানতে চায়।ডায়াবেটিকস হলে কি কি খাবার খাওয়া উচিত আর কি খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। তবে এটাও মনে রাখতে হবে একটা ডাইবেটিকস আক্রান্ত রোগীকে নিয়ম - তান্ত্রিক জীবনযাপন করতে হবে। আজকে আমরা আপনাদের জন্য ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য কি খাবার খাওয়া উচিত তা তুলে ধরবো। নিচে ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য তালিকা দেয়া হলোঃ
  • প্রতিবেলায় একটা নির্দিষ্ট টাইম অনুযায়ী খাবার খেতে হবে।
  • প্রতিদিন পরিমাণ করে ফলমূল খেতে হবে।
  • প্রতিদিন খাবারের তালিকায় শাকসবজি রাখতে হবে।
  • লাল আটার রুটি এবং লাল চালের ভাত খেতে হবে।
  • দই,ছানা,ও পনির খেতে হবে।
  • প্রোটিন যুক্ত খাবার খেতে হবে।
  • চিনি ছাড়া চা বা কফি খেতে পারেন।
  • ভেনিলা ও স্ট্রবেরি খেতে পারেন।
  • মসলা জাতীয়ঃ ধনে,জিরা,হলুদ,মরিচ,আদা,রসুন,পেঁয়াজ ইত্যাদি।
  • শর্করা বিহীন মিষ্টি খাবার যেমনঃ সুকরোল,স্যাকারিন পরিমিত খেতে পারেন।

শেষ কথা

প্রিয় পাঠক,আজকে আমরা ডায়াবেটিস কি - দ্রুত ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করার উপায় আর্টিকেলে ডায়াবেটিকস কত ধরনের এবং কি কি তা সম্পর্কে আলোচনা করেছি। ডায়াবেটিস কত হলে স্বাভাবিক,ডায়াবেটিস হলে কি কি সমস্যা হয় তা সম্পর্কে বিস্তারিত বলা হয়েছে। এছাড়াও ডায়াবেটিস কত হলে মানুষ মারা যায় তার সম্পর্কে সঠিকভাবে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। এবং ডায়বেটিস রোগীর খাদ্য তালিকা সম্পর্কে তুলে ধরেছে। আশা করছি,ডায়াবেটিস কি - দ্রুত ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করার উপায় এই আর্টিকেলটি বিস্তারিত করার মাধ্যমে আপনারা উপকৃত হয়েছেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ড্রিমসসেফ আইটিির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url