প্রসাবে ইনফেকশনের লক্ষণ ও প্রতিকার

আপনারা প্রসাবে ইনফেকশনের লক্ষণ ও প্রতিকার সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন। তাহলে আজকে আমরা আপনাদের জন্য প্রসাবে ইনফেকশনের কারণ,প্রসাবে ইনফেকশনের লক্ষণ ও প্রতিকার এবং প্রসাবে ইনফেকশন হলে কি ঔষধ খেতে হয় তা সম্পর্কে জানতে মনোযোগ সহ প্রসাবে ইনফেকশনের লক্ষণ ও প্রতিকার আর্টিকেলটি পড়ে ফেলুন।
প্রসাবে ইনফেকশনের লক্ষণ ও প্রতিকার
প্রসাবে ইনফেকশন হলে কিডনিসহ শরীরের বিভিন্ন সমস্যার সৃষ্টি হয়। তাই প্রসাবে ইনফেকশনের কারণ এবং লক্ষণ সম্পর্কে ধারণা রাখতে হবে এবং অতি দ্রুত চিকিৎসার করাতে হবে। তাই আজকের প্রসাবে ইনফেকশনের লক্ষণ ও প্রতিকার এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য।

পোষ্ট সূচিপত্রঃ প্রসাবে ইনফেকশনের লক্ষণ ও প্রতিকার

প্রসাবে ইনফেকশনের কারণ

প্রসাবে ইনফেকশন হওয়া চিকিৎসা ভাষায় বলে ইউরিনারি ট্যাক্ট ইনফেকশন (IUTI)। প্রসাবে ইনফেকশন হলো মূত্রতন্ত্রের সংক্রমণ। প্রসাবে ইনফেকশন বা ইউরিনারি ট্যাক্ট ইনফেকশন মেয়ে - ছেলে সবারই হয়ে থাকে। তবে ছেলেদের চেয়ে মেয়েদের সংক্রমণের প্রবণতা বেশি হয়। কারণ ছেলেদের মূত্রনালীর তুলনায় মেয়েদের দৈর্ঘ্য অনেক ছোট হয়। এবং মেয়েদের মুত্রনালী পায়ুপথের খুব কাছাকাছি হওয়ায় ব্যাকটেরিয়া পায়ু পথ থেকে সহজেই মূত্রনালীতে প্রবেশ করে।
ফলে প্রসাবের সংক্রমণের আশঙ্কা বেশি থাকে। আমরা জানি,মূত্রতন্ত্রের কাজ হলো প্রসাব তৈরি করে এবং সংরক্ষণ করে রাখে। আমাদের দেহের বজ্র পদার্থের মধ্যে অন্যতম হলো প্রসাব। আমরা অনেকেই জানিনা প্রসাব কিন্তু কিডনিতে তৈরি হয়ে মুত্রনালী থেকে মুত্রাশয়ের দিকে অগ্রসর হয়। এরপর মুত্রাশয় ইউরেথ্রা সাহায্যে আমাদের প্রসাব শেষ হওয়া না পর্যন্ত জমা করে রাখে।

আমাদের দেহের দুইটা কিডনির কাজ হলো ব্লাড থেকে দেহের বজ্র পদার্থ ফিল্টার করে তা প্রসাবের আকারে দেহ থেকে বের করে দেওয়া। প্রসাবে কিন্তু কোন জীবাণু থাকে না। তারপরও জীবাণু ইউরেথ্রা দিয়ে প্রসাবে প্রবেশ করে মূত্রাশয় পর্যন্ত গিয়ে সংক্রমণ ঘটিয়ে থাকে।

প্রসাবে ইনফেকশন হলে কি খেতে হয়

চিকিৎসকের মতে,প্রসাবে ইনফেকশন বা ইউরিনারি ট্যাক্ট ইনফেকশন হলে কিডনির সমস্যা হওয়ার পাশাপাশি শারীরিক বিভিন্ন সমস্যা হতে পারে। প্রসাবে ইনফেকশন একবার হলে বারবার হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এজন্য প্রসাবে ইনফেকশন হলে গুরুত্ব দিতে হবে।এবং আরো বলেন,প্রচুর পানি পান করার মাধ্যমে এবং কিছু খাবার খাবার আছে যা খাওয়ার মাধ্যমে ইনফেকশনের জন্য দায়ী ব্যাকটেরিয়া শরীর থেকে বের হয়ে যায়। তাহলে চলুন আজকে আমরা প্রসাবে ইনফেকশন হলে কি কি খেতে হয় বা খেলে উপকার পাওয়া যায় তা সম্পর্কে জেনে নেই।
  • ব্রোকলি
  • পেঁপে
  • দারুচিনি
  • রসুন
  • কমলা রস
  • ডাবের পানি
  • আঙ্গুরের রস
  • আনারসের জুস
  • স্ট্রবেরি
  • জাম
  • ক্রেনবেরি
  • পালং শাক

প্রসাবে ইনফেকশনের লক্ষণ ও প্রতিকার

আমাদের মধ্যে অনেকেরই প্রসাবে ইনফেকশন সম্পর্কে ধারণা নেই। আবার অনেকে প্রসাবে ইনফেকশনের লক্ষণ সম্পর্কে অবগত নয়। এজন্য শরীরের বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। তাই আমাদের সবার উচিত হবে প্রসাবে ইনফেকশনের লক্ষণ ও প্রতিকার সম্পর্কে জানা। তাহলে এবার চলুন আমাদের সকলের সুবিধার্থে প্রসাবে ইনফেকশনের লক্ষণ ও প্রতিকার সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেই।

প্রসাবে ইনফেকশনের লক্ষণ

  • ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া।
  • প্রসাব আসলে প্রসাব ধরে রাখা সম্ভব হয় না।
  • প্রসাবের গন্ধ বেশি হয়।
  • রাতে আরো বেশি ঘন ঘন প্রসাব আসে।
  • জ্বালাপোড়া করে।
  • মনে হয় যে শরীরে একটু গরম বেশি লাগছে
  • হালকা জ্বর আসে।
  • শরীরে হালকা কাঁপুনি হওয়া।
  • তলপেট ব্যথা করে।
  • পিঠের নিচে একটু ব্যথা অনুভব করা।

প্রস্রাবে ইনফেকশনের ও প্রতিকার

প্রসাবে ইনফেকশন বা ইউরিনারি ইনফেকশন যেহেতু একটি ব্যাকটেরিয়া সংক্রান্ত রোগ। তাই রোগ দেখা দিলে খুব দ্রুত চিকিৎসকের সাথে দেখা করে দ্রুত চিকিৎসা করাতে হবে। কারণ যদি দেরি হয়ে যায় তাহলে ইনফেকশন কিডনিসহ অন্যান্য জায়গাতেও ছড়াতে পারে। এছাড়াও আপনি চিকিৎসা করানোর পাশাপাশি ঘরোয়া উপায়ে নিম্নোক্ত কাজগুলো করতে পারেন। যেমনঃ
  • সব সময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে।
  • প্রচুর পানি পান করতে হবে।
  • নিরামিষ জাতীয় খাবার খেতে হবে।
  • ক্রেনবেরি,রাম্পবেরি,টক দই,আচার,কলা,বাদাম,ডাল,বীজ খেতে পারেন।
  • নিয়মিত আনারস খেলে উপকার পাওয়া যায়।
  • মধু মিশ্রিত পানি খেতে পারেন।
  • ভিটামিন এ,ই,সি,সমৃদ্ধ খাবার বেশি বেশি খেতে হবে।
  • পুকুরের পানি বা অপরিষ্কার পানিতে গোসল করা থেকে বিরত থাকতে হবে।

প্রসাবে ইনফেকশন হলে কি ঔষধ খেতে হবে

অনেকে জানতে চায় প্রসাবে ইনফেকশন হলে কি ওষুধ খেতে হবে। তবে এ সম্পর্কে আমরা কিছু তথ্য বা পরামর্শ দিতে পারি। প্রসাবে ইনফেকশন হলে কিন্তু অবশ্যই গুরুত্বসহ দেখতে হবে। কারণ দেরি হয়ে গেলে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় হতে পারে। যার ফলে আমাদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি বেড়ে যাবে। আমাদের উচিত হবে ইনফেকশন দেখা দিলে তাড়াতাড়ি চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবন করা। আর আমরা আগে কখনোই ইন্টারনেটে ওষুধের নাম দেখে ওষুধ কিনে খাওয়ার চেষ্টা করবো না।
কারণ হিসেবে আমরা সবাই জানি,আন্টিরবায়োটি ওষুধ সহ বিভিন্ন ওষুধে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকে। এই পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার কারণে স্বাস্থ্যর ঝুঁকি বাড়ে। সবার ওষুধ সম্পর্কে বা ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে অনেকেই ধারণা রাখতে নাও পারে। তারপরও আপনাদের সুবিধার্থে কিছু অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধের নাম তুলে ধরলাম। এসব প্রত্যেকটি ট্যাবলেট আপনার ইনফেকশনের যন্ত্রণা দূর করতে সক্ষম। এবং এসব অ্যান্টিবায়োটিক সেবনের ফলে আপনার প্রসাবের ইনফেকশন দূর হয়ে যাবে।
  • ট্রাইমেথোপ্রিম
  • ফসফোমাইসিন
  • সেফালেক্সিন
  • সেফট্রিয়াক্সোন
  • ফ্লোরোকুইনোলন
  • সিপ্রোফ্লক্সাসিন
  • মনোসেফ

ঘন ঘন প্রসাব থেকে মুক্তির ঔষধ

আমরা জানি,একজন সুস্থ মানুষ প্রতিদিন ৬ থেকে ৭ বার পর্যন্ত প্রসাব করে থাকে। আর যদি পানি বেশি খায় সে ক্ষেত্রে ৮ থেকে ৯ বার হতে পারে এর বেশি না। কিন্তু প্রতিদিন যদি এর চেয়ে প্রসাব বেশি হয় তাহলে ঘন ঘন প্রসাবের সমস্যা বলতে পারেন। এই সমস্যা বিভিন্ন কারনে হয়ে থাকে। আজকে আমরা জানবো কিভাবে ঘন ঘন প্রসাব থেকে মুক্তির ঔষধ সম্পর্কে। এই সম্পর্কে বলতে গেলে প্রথমেই বলি ঘন ঘন প্রসাব বন্ধ হওয়ার ওষুধ খেতে হলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী খেতে হবে বা খাওয়া উচিত হবে।

ইন্টারনেটে ওষুধ সম্পর্কে আমরা উপরে আলোচনা করেছি তারপরও বলি ওষুধ সম্পর্কে সবার ধারণা থাকে না আর থাকলেও সেই ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সম্পর্কেও সঠিক ধারণা নাও থাকতে পারে। তাই উচিত হবে আমাদের সকলেরই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবন করা শুধু যে ঘন ঘন প্রসাব হওয়ার ক্ষেত্রে খাবেন তা কিন্তু না শরীরের যেকোনো ব্যাধি দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন তারপর ওষুধ খাবে।

নিজে নিজে ওষুধ কিনে খেতে গেলে ধারণা না থাকার কারণে উপকারের চেয়ে অপকারও হতে পারে। তবে আমরা কিছু ঘরোয়া পদ্ধতি বা উপায় অবলম্বন করে ঘন ঘন প্রসাব থেকে মুক্তি পেতে পারি।
  • প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে। তবে রাতে ঘুমানোর আগে না।
  • ডায়াবেটিস থাকলে ডায়াবেটিস কন্ট্রোল রাখতে হবে।
  • প্রসাবের থলি কে ট্রেনিং করাতে হবে অর্থাৎ একটি নির্দিষ্ট সময় অনুযায়ী প্রসাব করতে হবে।
  • নিয়মিত কিগল এক্সারসাইজ করতে হবে।
  • খাদ্য অভ্যাসে চা-কফি চকলেট পরিহার করতে হবে।
  • প্রতিদিন ফল খেতে হবে।
  • খাদ্য তালিকায় শাক সবজি রাখতে হবে।
  • ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে।
  • প্রোটিন যুক্ত খাবার খেতে হবে।

শেষ কথা

প্রিয় পাঠক,আজকে আমরা প্রসাবে ইনফেকশনের লক্ষণ ও প্রতিকার এই আর্টিকেলের এর মাধ্যমে প্রসাবে ইনফেকশনের কারণ,প্রসাবে ইনফেকশন হলে কি খেতে হয় তার সম্পর্কে তুলে ধরেছি। এবং প্রসাবে ইনফেকশনের লক্ষণ ও প্রতিকার সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। এছাড়াও প্রসাবে ইনফেকশন হলে কি ঔষধ খেতে হবে,ঘন ঘন প্রসাব থেকে মুক্তির ঔষধ এবং ওষুধ ছাড়াও ঘরোয়া পদ্ধতিতে কিভাবে প্রসাবে ইনফেকশন এবং ঘন ঘন প্রসাব থেকে মুক্তি পাওয়া যায় তা আপনাদের কে বলেছি। আশা করছি,এই আর্টিকেলটি পড়ার মাধ্যমে আপনারা উপকৃত হয়েছেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ড্রিমসসেফ আইটিির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url