অতিরিক্ত স্বপ্নদোষ থেকে মুক্তির উপায়

প্রিয় পাঠক, আপনারা অতিরিক্ত স্বপ্নদোষ থেকে মুক্তির উপায় সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন। তাহলে আজকের আর্টিকেলটি শুধু আপনাদের জন্য। আজকে আমরা স্বপ্নদোষ বেশি হয় কেন, অতিরিক্ত স্বপ্নদোষ হলে কি সমস্যা হয়, এবং অতিরিক্ত স্বপ্নদোষ থেকে মুক্তির উপায় সম্পর্কে আলোচনা করবো। তাই আপনারা অতিরিক্ত স্বপ্নদোষ থেকে মুক্তির উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে আর্টিকেলটি পড়ুন।
অতিরিক্ত স্বপ্নদোষ থেকে মুক্তির উপায়
বয়সন্ধিকাল থেকে স্বপ্নদোষ হওয়া শুরু হয়। স্বপ্নদোষ হওয়া অস্বাভাবিক কিছু না। তবে যদি অতিরিক্ত স্বপ্নদোষ হয় তাহলে শারীরিক বিভিন্ন ক্ষতি হয়। তাই অতিরিক্ত স্বপ্নদোষ থেকে মুক্তি পেতে অতিরিক্ত স্বপ্নদোষ থেকে মুক্তির উপায় এই আর্টিকেলটি পড়ে ফেলুন।

নাইট ফল মানে কি

নাইট ফল যাকে আমরা স্বপ্নদোষ বলে থাকি। নাইট ফল বা স্বপ্নদোষ পুরুষদের ক্ষেত্রে একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। নাইট ফল বা স্বপ্নদোষ হওয়া কোন শারীরিক সমস্যা নয়। আমাদের বয়ঃসন্ধিকালে দেহের যৌন বৈশিষ্ট্যসমূহ কার্যকলাপের ফলস্বরূপ ঘটে থাকে। নাইট ফল বা স্বপ্নদোষ সাধারণত ঘুমের মধ্যে হরমোন পরিবর্তনের কারণে হয়ে থাকে। প্রায় সব বয়সের পুরুষদের স্বপ্নদোষ এর সম্মুখীন হতে হয়। বিশেষ করে ১৮-৩০ বছর বয়সের পুরুষদের মধ্যে স্বপ্নদোষের অভিজ্ঞতা বেশি থাকে।

নাইট ফল বা স্বপ্নদোষ হওয়া একটি সাধারণ বিষয়। তবে হ্যাঁ যদি স্বাভাবিকের চেয়ে অর্থাৎ মাসে ২-৩ বার এর বেশি অতিরিক্ত স্বপ্নদোষ হয়ে থাকে তাহলে চিন্তার বিষয়। এজন্য আমাদের অতিরিক্ত স্বপ্নদোষ থেকে পরিত্রাণ পেতে অবশ্যই চিকিৎসা করানো উচিত হবে।

স্বপ্নদোষ বেশি হয় কেন

আমরা সবাই জানি, আমরা পুরুষ মানুষ আমাদের স্বপ্নদোষ হওয়া স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু যদি স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বা অতিরিক্ত মাত্রায় স্বপ্নদোষ হয় তখন কিন্তু স্বাভাবিক থাকে না। এখন আপনাদের প্রশ্ন হচ্ছে স্বপ্নদোষ বেশি হয় কেন? স্বপ্নদোষ বেশি হয় কারণ আমাদের মাঝে কিছু বদ অভ্যাস আছে যেমন ধরুন অতিমাত্রায় হস্তমৈথুন করা বা মাস্টারবেশন করা যার কারণে ধাতু পাতলা হওয়া বা দুর্বলতা দেখা দেয় এই ধাতু দুর্বলতার কারণে অতিরিক্ত স্বপ্নদোষ হয়। 

এছাড়া শারীরিক দুর্বলতার কারণে অতিমাত্রায় স্বপ্নদোষ হয়। আবার মানসিক দুর্বলতার কারণে মানসিক ব্যাপক স্ট্রেসে থাকার কারণে আমাদের অতিমাত্রায় স্বপ্নদোষ দেখা দেয়। আবার স্নায়ু দুর্বলতার কারণে স্বপ্নদোষ হয়ে থাকে। নার্ভে আঘাত লাগার কারণে স্বপ্নদোষ হয়ে থাকে। অতিরিক্ত বা অত্যাধিক উত্তেজনার কারণেও স্বপ্নদোষ হয়ে থাকে। এবং বিভিন্ন রোগের কারণেও আবার কখনো কখনো অতিরিক্ত স্বপ্নদোষ দেখা দেয়।

সর্বশেষ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে কিশোর বয়স থেকে শুরু করে প্রাপ্তবয়স্ক ছেলে - মেয়েদের মধ্যে পর্নোগ্রাফিতে আসক্ত হওয়ার প্রবণতা অনেক বেশি লক্ষ্য করা যায়। পর্নোগ্রাফি দেখার ফলে মাথার ভেতর যৌন আকাঙ্ক্ষা বৃদ্ধি পায়। এটিও একটি অন্যতম কারণ স্বপ্নদোষ বেশি হওয়ার।

অতিরিক্ত স্বপ্নদোষ হলে কি সমস্যা হয়

আমাদের মাসে ২-৩ বার স্বপ্নদোষ হওয়ার স্বাভাবিক। তবে এর চেয়ে বেশি বা অতিরিক্ত স্বপ্নদোষ হওয়া একটি বড় সমস্যা। অতিরিক্ত স্বপ্নদোষ হলে আমাদের শরীরে বিভিন্ন রকমের সমস্যা দেখা দেয়। এবার চলুন আমাদের অতিরিক্ত স্বপ্নদোষ হলে কি সমস্যা হয় তা সম্পর্কে জেনে নেই।
  • যৌন ক্ষমতা কমে যায়।
  • স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়া।
  • খাবারের প্রতি রুচি কমে যায়।
  • শারীরিক দুর্বলতা দেখা দেয়।
  • রাতে ঘুম কম হওয়া।
  • চেহারার লাবণ্যতা নষ্ট হয়ে যায়।
  • মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়। এছাড়াও
  • দীর্ঘদিন অতিরিক্ত স্বপ্নদোষের কারণে লিঙ্গ ধ্বজভঙ্গ হতে পারে। এবং
  • দাম্পত্য জীবনে অসুখী হতে পারেন।
এছাড়াও অতিরিক্ত স্বপ্নদোষের কারণে শরীরের বিভিন্ন ক্ষতি হয়ে থাকে। যা আমাদের স্বাভাবিক জীবন যাপনে মারাত্মক ব্যাঘাত সৃষ্টি করে। পরবর্তীতে দাম্পত্য জীবনেও এর প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। দেখা যায় দাম্পত্য জীবন অসুখী হওয়ার কারণে একটা সুন্দর সংসার ভেঙে যায় বা অনেকে আলাদা হওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। তাই আমাদের উচিত সঠিক নিয়ম মেনে জীবন যাপন করা। এবং আমাদের চিন্তা - চেতনা পরিশুদ্ধ করা। তাহলেই আমরা অতিরিক্ত স্বপ্নদোষ হওয়া থেকে মুক্ত থাকবো।

অতিরিক্ত স্বপ্নদোষ থেকে মুক্তির উপায়

আমরা অতিরিক্ত স্বপ্নদোষ হওয়ার ফলে চিন্তিত হয়ে পড়ি। আর এই সমস্যা হওয়া কিন্তু চিন্তারই বিষয়। কেননা অতিরিক্ত স্বপ্নদোষ এর ফলে আমাদের শরীরে বিভিন্ন সমস্যার সৃষ্টি হয়ে থাকে। এজন্য খুব দ্রুত এর প্রতিকার করতে হবে। আমাদের কাছে অনেকেই জানতে চায় অতিরিক্ত স্বপ্নদোষ থেকে মুক্তির উপায় সম্পর্কে। তাই আজকে আমরা আপনাদের জন্য অতিরিক্ত স্বপ্নদোষ থেকে মুক্তির উপায় সম্পর্কে আলোচনা করবো।

অতিরিক্ত স্বপ্নদোষ থেকে মুক্তির উপায় সম্পর্কে বলতে গেলে প্রথমে বলতে হয় স্বপ্নদোষের চিকিৎসার জন্য কোন ওষুধ খাওয়ার পূর্বে আমাদের নিজের চিন্তা - ভাবনার পরিবর্তন করতে হবে। এর পাশাপাশি অতিরিক্ত স্বপ্নদোষ মানুষদের ক্ষেত্রে একা থাকা উচিত হবে না। কারণ একা থাকলে বিভিন্ন অশ্লীল কাজ করতে মন চাইবে এবং নেগেটিভ চিন্তা - ভাবনা করার সম্ভাবনা বেশি থাকে।

তাই স্বপ্নদোষের সমস্যা দূর করতে নিচের বিষয়গুলো মনোযোগ সহ খেয়াল রেখে জীবন যাপন করতে হবে। এখন চলুন জেনে নেই, অতিরিক্ত স্বপ্নদোষ থেকে প্রতিকার পেতে কি কি বিষয় মেনে চলতে হবে।
  • স্বপ্নদোষ একটি মানসিক রোগ। তাই নিজের মনকে পরিষ্কার রাখতে হবে।
  • রাতে ঢিলেঢালা পোশাক পরে ঘুমাতে হবে।
  • অতিরিক্ত যৌন চিন্তা বাদ দিতে হবে।
  • পর্ণগ্রাফি দেখা বন্ধ করতে হবে।
  • সেক্স বিষয়ক বই বা চটি গল্প পড়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
  • ঘুমানোর সময় ড্যান পাশ হয়ে বা সোজা হয়ে ঘুমাতে হবে।
  • ঘুমানোর পূর্বে প্রসাব করে ঘুমাতে হবে।
  • রাতে প্রসাব আসলে আবার প্রসাব করে ঘুমাতে হবে।
  • কোষ্ঠকাঠিন্য হলে দ্রুত চিকিৎসা প্রতিকার করতে হবে।
  • বিয়ে করার উপযুক্ত বয়স হলে বিয়ে করা উত্তম হবে।
এরপরও যদি ভালো না হয় অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। আর যদি আপনি চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার সুযোগ না পান বা নিজেই ঘরোয়া পদ্ধতি অনুসরণ করে অতিরিক্ত স্বপ্নদোষ থেকে মুক্তি পেতে চান। তাহলে নিচে আমরা আপনার জন্য ঘরোয়া উপায়গুলো তুলে ধরলাম।
  • অতিরিক্ত স্বপ্নদোষ থেকে মুক্তি পেতে ৪-৫ গ্রাম মিশ্রির সাথে অল্প পরিমাণ কর্পূর মিশিয়ে খেতে হবে। এভাবে এক মাস খেলে অতিরিক্ত স্বপ্নদোষ থেকে মুক্তি পেতে পারেন।
  • প্রতিদিন খালি পেটে কাঁচা রসুন এর ২-৩ টা কোয়ার সাথে মধু মিশিয়ে ফেলে বীর্য ঘন হয় এবং বৃদ্ধি পায়। ফলে স্বপ্নদোষের ঘাটতি পূরণ করার সাথে সাথে স্বপ্নদোষ হওয়া কমে আসে।
  • স্বপ্নদোষ থেকে প্রতিকার পেতে ৩-৪ গ্রাম ধনেপাতা এর সাথে আধা গ্রাম ছোট এলাচের বীজ ও ২ গ্রাম মিশ্রি একসাথে গুড়ো করতে হবে। এরপর প্রতিদিন সকাল এবং সন্ধ্যায় পানির সাথে খেলে স্বপ্নদোষ থেকে মুক্তি পেতে পারেন।
  • ঘুমানোর সময় ত্রিফলা চূর্ণ এর সাথে মধু মিশিয়ে হাতের তালুতে নিয়ে জিব্বা দিয়ে চেটে খেতে হবে। এভাবে কিছুদিন খেলে স্বপ্নদোষ বা অনিচ্ছাকৃত ধাতু নির্গমনের হাত থেকে খুব সহজে মুক্তি পেতে পারেন।

স্বপ্নদোষ বন্ধ করার ইসলামিক উপায় 

স্বপ্নদোষ বন্ধ করতে ইসলামিক উপায়ে অর্থাৎ স্বপ্নদোষ বন্ধ করার দোয়া এক্ষেত্রে আমরা আপনাদেরকে যে আমলের কথাটি বলছি সে আমলটি আমাদের প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যাদের স্বপ্নদোষ হয় তাদেরকে এই আমলটি পালন করার জন্য বলেছেন। আমলটি হচ্ছে আল কুরআনের সূরা তারিক। এই সূরা আপনারা অনেকে জেনে থাকবেন আবার অনেকে আছেন জানেন না। তবে আপনাদের সুবিধার্থে বলে রাখি কোরআনের ৩০ নম্বর পারা যদি খোঁজেন খোঁজ নিয়ে পড়ে সেখানে একটি সূরা পাবেন সূরা তারিক।

সূরা তারিকের ১ নম্বর আয়াত থেকে শুরু করে ১০ নম্বর আয়াত পর্যন্ত প্রতিদিন ঘুমানোর আগে পড়ে বুকে ফু দিয়ে ঘুমালে ইনশাল্লাহ স্বপ্নদোষ থেকে মুক্তি পাবেন। এছাড়াও ঘুমানোর পূর্বে একবার দুরুদ শরীফ, একবার আয়াতুল কুরসী এর সাথে তিনবার সূরা ইখলাস, তিনবার সূরার নাস এবং তিনবার সূরা ফালাক পড়ে বুকে ফু দিয়ে ঘুমালে বিভিন্ন খারাপ জিন বা স্বপ্ন আসবেনা এবং স্বপ্নদোষ হওয়া কমে আসবে।

অতিরিক্ত স্বপ্নদোষ থেকে মুক্তির উপায় - শেষ কথা 

আজকে আমরা আপনাদের জন্য স্বপ্নদোষ বেশি হয় কেন, অতিরিক্ত স্বপ্নদোষ হলে কি সমস্যা হয় এবং অতিরিক্ত স্বপ্নদোষ থেকে মুক্তির উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। এবং কিভাবে ইসলামিক উপায়ে স্বপ্নদোষ হওয়া বন্ধ করা যায় তার পদ্ধতি সম্পর্কে আলোচনা করেছি। আশা করছি, আপনারা মনোযোগ সহ পুরোপুরি আর্টিকেলটি পড়ে উপকৃত হয়েছেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ড্রিমসসেফ আইটিির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url