ভিটামিন ই এর উপকারিতা ও অপকারিতা

আপনারা ভিটামিন ই এর উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন। তাহলে আজকে আমরা আপনাদের জন্য ভিটামিন কত প্রকার ও কি কি, ভিটামিন ই উৎস, ভিটামিন ই এর অভাবে কি হয় এবং ভিটামিন ই এর উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করবো। তাই ভিটামিন ই সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ভিটামিন ই এর উপকারিতা ও অপকারিতা আর্টিকেলটি পড়ুন।
ভিটামিন ই এর উপকারিতা ও অপকারিতা
অন্যান্য ভিটামিনের মতোই ভিটামিন ই আমাদের দেহের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু অতিরিক্ত গ্রহণের ফলে আবার স্বাস্থ্যের ক্ষতিও হতে পারে। এজন্য ভিটামিন ই সম্পর্কে আমাদের সবারই সঠিক ধারণা থাকা উচিত। আপনাদের কথা ভেবে আমাদের ভিটামিন ই এর উপকারিতা ও অপকারিতা আর্টিকেলটি।

ভিটামিন কত প্রকার ও কি কি

ভিটামিন প্রধানত দুই প্রকারঃ
  • ফ্যাট সলিউবল
  • ওয়াটার সলিউবল
ফ্যাট সলিউবলঃ ফ্যাট সলিউবল বলতে, সেসব ভিটামিন কে বুঝায় যা ফ্যাট বা চর্বিতে দ্রবীভূত হয়ে থাকে। এ ভিটামিন গুলো শরীরে দিনের পর দিন জমা হয়ে থাকে। এসব ভিটামিন আবার ৪ প্রকার তা হলো;
  • ভিটামিন এ
  • ভিটামিন ডি
  • ভিটামিন ই এবং
  • ভিটামিন কে
ওয়াটার সলিউবলঃ ওয়াটার সলিউবল বলতে বুঝায়, পানিতে দ্রবণীয় হয় যা সঞ্চয় করে রাখা যায় না। এবং অতিরিক্ত পরিমাণ ভিটামিন জমা হলে তা প্রসাবের মাধ্যমে বের হয়ে যায়। এসব ভিটামিন ২ প্রকার তা হলো;
  • ভিটামিন বি
  • ভিটামিন সি
ভিটামিন বি আবার ৮ টি উপাদান নিয়ে গ্রুপ গঠিত। যাদের সমষ্টিকে ভিটামিন বি কমপ্লেক্স বলা হয়ে থাকে। ভিটামিন বি এর গ্রুপগুলো হলো;
  • ভিটামিন বি১
  • ভিটামিন বি২
  • ভিটামিন বি৩
  • ভিটামিন বি৫
  • ভিটামিন বি৬
  • ভিটামিন বি৭
  • ভিটামিন বি৯
  • ভিটামিন বি১২

ভিটামিন ই উৎস

আমাদের শরীরকে সুস্থ সবল রাখতে এবং বিভিন্ন রোগ থেকে রক্ষা পেতে ভিটামিনের কোন বিকল্প নেই। তেমন একটি ভিটামিন হলো ভিটামিন ই। আমরা অনেকেই জানিনা ভিটামিন ই কোন খাবারের মাধ্যমে আমরা পেয়ে থাকি। ভিটামিন ই অনেক খাবারেই বিদ্যমান। বিভিন্ন খাদ্য গ্রহণের মাধ্যমে আমরা ভিটামিন ই পেয়ে থাকি। এখন চলুন জেনে নেই, ভিটামিন ই উৎস খাবার গুলো কি কি। ভিটামিন ই উৎস খাবার গুলো হলো;
  • চিনা বাদাম
  • আখরোট
  • উদ্ভিজ্জ তেল
  • গম
  • সয়াবিন
  • সাফলোয়ার
  • সূর্যমুখী
  • কুসুম
  • পেপারিক
  • বিট গ্রিনস
  • অ্যাভোকাডো
  • কুমড়ো
  • সরিষা বীজ
  • অ্যাসপারাগাস
  • স্যালমন মাছ
  • সামুদ্রিক খাদ্য
  • সবুজ শাকসবজি ইত্যাদি

ভিটামিন ই এর অভাবে কি হয়

অনেকে জেনে থাকবেন একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের দৈনিক প্রয়োজন ১৫ মিলিগ্রাম। তবে যেসব মহিলাদের বাচ্চা আছে এবং বুকের দুধ পান করে থাকে সেসব মহিলাদের জন্য দৈনিক ১৯ মিলিগ্রাম ভিটামিন ই গ্রহণ করা প্রয়োজন। তাহলে বুঝতে পারছেন, আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখতে প্রতিদিন ভিটামিন কি জাতীয় খাবার গ্রহণ করা উচিত।
আর যখন আমাদের শরীরে নির্দিষ্ট পরিমাণ ভিটামিন ই গ্রহণ করা না হলে তখন শরীরে বিভিন্ন উপসর্গ বা লক্ষ্য দেখা দিবে। সবার জানা উচিত ভিটামিন ই এর অভাবে কি হয় বা কি হতে পারে। ভিটামিন ই এর অভাবে যেসব লক্ষণ দেখা দিবে তা হলো;
  • দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়া।
  • পেশী দুর্বলতা।
  • বন্ধ্যাত্ব হওয়া।
  • স্নায়ু শক্তি কমে যাওয়া।
  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায় ইত্যাদি।

ভিটামিন ই মুখে মাখলে কি হয়

ভিটামিন ই তে রয়েছে প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। যার কারণে ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে ভিটামিন ই অপরিহার্য। যদি আপনি রূপচর্চা করতে পছন্দ করেন তাহলে নিয়মিত ভিটামিন ই ব্যবহার করুন। যারা এ বিষয়ে জানে তারা সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে নিয়মিত ভিটামিন ই ব্যবহার করে থাকেন। মুখের যে কোন সমস্যা দূর করতে নিয়মিত ভিটামিন ই ব্যবহার করুন। এখন প্রশ্ন ভিটামিন ই মুখে মাখলে কি হয়? নিয়ম করে ভিটামিন ই ব্যবহার করলে মুখের যেসব সমস্যা দূর হয় তা হলো;
  • ব্রণ
  • ফুসকুড়ি
  • ছোপ ছোপ দাগ দূর করা সহ
  • ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে।

ভিটামিন ই এর উপকারিতা ও অপকারিতা

আমাদের শরীরকে সুস্থ সবল রাখতে প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, আয়রন যেমন প্রয়োজন। তেমনি ভিটামিনেরও অনেক প্রয়োজন। দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি সহ শরীরের বিভিন্ন রোগ দূর করতে এবং শরীরকে সুস্থ রাখতে আমরা অনেক ধরনের ভিটামিন দেখতে পাই। তার মধ্যে একটি ভিটামিন হলো ভিটামিন ই।
অন্যান্য ভিটামিনের মতই ভিটামিন ই এর উপকারিতা অপরিহার্য। তাহলে আজকে আমরা ভিটামিন ই এর উপকারিতা ও অপকারিতা আর্টিকেলের মাধ্যমে জেনে নেবো ভিটামিন ই এর উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে।

ভিটামিন ই এর উপকারিতা

আমরা জানি, ভিটামিন ই এর উপকারিতা অনেক। ভিটামিন ই আমাদের কোষ কে সুস্থ রাখতে সহায়তা করে। ভিটামিন ই আমাদের চোখের জন্যও অনেক উপকারী। ভিটামিন ই এর ফলে আমরা ছত্রাকের মতো বিষাক্ত রোগ প্রতিরোধ করা যায়। এছাড়াও ভিটামিন ই পোস্টাগ্লান্ডিনস উৎপাদনে কাজ করে থাকে। এবং ত্বক এবং চুলের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে ভিটামিন ই এর উপকারিতা অপরিসীম। এছাড়াও
  • ভিটামিন ই তে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান। যা ত্বকের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করে থাকে।
  • ভিটামিন ই গ্রহণের ফলে ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করে।
  • স্মৃতি শক্তি ধরে রাখতে ভিটামিন ই অনেক উপকারী।
  • ত্বকের শুষ্কতা দূর করতে এবং আদ্রতা ধরে রাখতে ভিটামিন ই অনেক উপকারী। শীতে ভিটামিন ই ময়েশ্চারাইজার হিসেবে কাজ করে।
  • ভিটামিন ই ত্বকের বলিরেখা সহ বিভিন্ন দাগ কমাতে সাহায্য করে।
  • ভিটামিন ই এর ব্যবহারের ফলে ত্বক অনেক নরম থাকে।
  • ভিটামিন ই মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে।
  • নারীদের প্রজনন ক্ষমতা ভালো রাখতে সহায়তা করে।
  • ভিটামিন ই ক্যাপসুল ব্যবহার করলে চুলের যাবতীয় সমস্যা দূর হয়ে থাকে।
  • দেহের ক্ষত সারাতে ভিটামিন ই যুক্ত তেল ব্যবহার করলে উপকার পাওয়া যায়।
  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে ভিটামিন ই অনেক কার্যকরী।

ভিটামিন ই এর অপকারিতা

ভিটামিন আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। কিন্তু অতিরিক্ত ভিটামিন গ্রহণে আমাদের শরীরে অনেক ক্ষতিও হয়ে থাকে। তেমনি ভিটামিন ই প্রয়োজনীয় তুলনায় বেশি গ্রহণ করলে আমাদের দেহকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। যেহেতু ভিটামিন ই চর্বিযুক্ত দ্রবণীয়। তাই পর্যাপ্ত গ্রহণ করলে তা শরীরে জমা হয়ে থাকে। পানিতে দ্রবণীয় ভিটামিন অতিরিক্ত গ্রহণ করলে তা প্রস্রাবের মাধ্যমে বের হয়ে যায়। কিন্তু ভিটামিন ই বের হয় না। 

ফলে অতিরিক্ত গ্রহণে বিভিন্ন রোগের ঝুঁকির আশঙ্কা থাকে। এজন্য যখন ভিটামিন ই যুক্তখাবার গ্রহণ ব্যতীত বিভিন্ন ভিটামিন ই ট্যাবলেট গ্রহণ করবেন তখন অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সেবন করার চেষ্টা করবেন। তাহলে চলুন অতিরিক্ত ভিটামিন ই গ্রহণের ফলে কি হতে পারে বা ভিটামিন ই এর অপকারিতা গুলো কি কি জেনে নেই।
  • ভিটামিন ই অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে শরীরে অনুচক্রিকা হ্রাস পায়। ফলে রক্ত জমাটে বাধাগ্রস্ত হয় কেটে গেলে অনেক রক্তপাত হয়ে থাকে।
  • ভিটামিন ই এর ব্যবহারের ফলে প্রোস্টেট ক্যান্সারে ঝুকি বাড়াতে পারে।
  • ভিটামিন এই অতিরিক্ত গ্রহণের ফলে ডায়রিয়া হতে পারে।
  • ভিটামিন ই ব্যবহারের হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোক রোগীদের মৃত্যুর আশঙ্কা থাকতে পারে।

প্রতিদিন কতটুকু ভিটামিন ই দরকার

একজন মানুষের দৈনিক কি পরিমাণ ভিটামিন গ্রহণ করা প্রয়োজন তা সম্পর্কে সবারই ধারণা থাকা উচিত। কেননা আমরা আগেই জেনেছি যে, অতিরিক্ত ভিটামিন গ্রহণের ফলে শরীরের বিভিন্ন ধরণের সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। বয়স ভেদে প্রতিদিন আমাদের শরীরে ভিটামিনের চাহিদা আলাদা থাকে। যেমনঃ
এআই অনুযায়ী,
  • ০ - ৬ মাস বাচ্চাদের ক্ষেত্রে ৪ মিলিগ্রাম।
  • ৭ - ১ বছর বাচ্চাদের ক্ষেত্রে ৫ মিলিগ্রাম।
আরডিএ অনুযায়ী,
  • ১-৩ বছর শিশুদের ক্ষেত্রে ৬ মিলিগ্রাম।
  • ৪ - ৮ বছর শিশুদের ক্ষেত্রে ৭ মিলিগ্রাম।
  • ৯ - ১৩ বছর শিশুদের ক্ষেত্রে ১১ মিলিগ্রাম।
  • ১৪ - ১৮ এবং প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে ১৫ মিলিগ্রাম।
  • বাচ্চাকে দুধ দেওয়া মায়েদের ক্ষেত্রে ১৯ মিলিগ্রাম ভিটামিন ই গ্রহণ করা প্রয়োজন।

ভিটামিন ই নাইট ক্রিম

আমরা সবাই জানি, ভিটামিন ই আমাদের শরীরের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে আমাদের দেহের ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে ভিটামিন ই অপরিহার্য। অনেকে আছেন ভিটামিন ই নাইট ক্রিম সম্পর্কে জানতে চান। বাজারে বিভিন্ন ধরনের নাইট ক্রিম পাওয়া যায়। এসব ক্রিম সম্পর্কে আমরা কিন্তু সঠিক তথ্য জানিনা। বর্তমানে অনেকেই আছেন যে অসৎ উপায় অবলম্বন করে অধিক লাভের আশায় ব্যবসা করে থাকেন। বাজার থেকে এসব প্রোডাক্ট ব্যবহারে আমাদের ত্বকের বিভিন্ন ক্ষতি হয়ে থাকে।

এজন্য যখন কিনবেন তখন অবশ্যই যাচাই-বাছাই করে কেনার চেষ্টা করবেন। তাই আমরা আপনাদের কথা চিন্তা করে কিভাবে ঘরোয়া উপায় এ ভিটামিন ই নাইট ক্রিম তৈরি করা যায় সে সম্পর্কে আলোচনা করবো। এখন চলুন জেনে নিবো সহজে ঘরোয়া উপায়ে কিভাবে ভিটামিন ই নাইট ক্রিম তৈরি করা যায়। নাইট ক্রিম বানানোর জন্য দুইটি উপকরণ লাগবে।
  • রাতে ব্যবহার করার জন্য ভালো নাইট ক্রিম এবং
  • ভিটামিন ই ক্যাপসুল
যেভাবে তৈরি করবেন তা হলো; রাতে নাইট ক্রিমের সাথে ভিটামিন ই ক্যাপসুল কয়েক ফোটা দিয়ে ভালোভাবে মিশ্রণ করুন। এরপর কিছুক্ষণ ফ্রিজে রেখে দিন। তারপর রাতে ঘুমানোর আগে মুখে দিয়ে ঘুমিয়ে পড়ুন। এভাবে প্রতিদিন ব্যবহার করলে ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পাবে। ত্বক হবে নরম ও ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পাবে।

ভিটামিন ই এর উপকারিতা ও অপকারিতা - শেষ কথা

প্রিয় পাঠক, ভিটামিন ই এর উপকার সম্পর্কে কম - বেশি সবাই জানতাম। তবে আশা করছি, আপনারা ভিটামিন ই এর উপকারিতা ও অপকারিতা এই আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ পড়ার মাধ্যমে ভিটামিন ই সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। সব ভিটামিনই আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য উপকার। তবে অতিরিক্ত গ্রহণ করলে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতি হতে পারে। তাই চেষ্টা করবো ভিটামিন যুক্ত খাবার গ্রহণ ছাড়া অতিরিক্ত ভিটামিন গ্রহণের প্রয়োজন পড়লে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সেবন করবো।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ড্রিমসসেফ আইটিির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url