৭ উপায়ে এনিমেশন ভিডিও তৈরি করে ইনকাম করার উপায়

ফ্রিল্যান্সিং কোন কাজের চাহিদা বেশিএনিমেশন ভিডিও তৈরি করে ইনকাম করার উপায় সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন? তাহলে আপনারা সঠিক জায়গায় এসেছেন। আজকে আমরা এনিমেশন ভিডিও তৈরির সফটওয়্যার, এনিমেশন ভিডিও কিভাবে বানাবো এবং এনিমেশন ভিডিও তৈরি করে ইনকাম তা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবো।
৭ উপায়ে এনিমেশন ভিডিও তৈরি করে ইনকাম করার উপায়
বর্তমানে এনিমেশন ভিডিও তৈরি করে অনেক বেকার ছেলে-মেয়ে স্বাবলম্বী হচ্ছে। তবে তা সহজ না তার জন্য প্রয়োজন কঠোর পরিশ্রম এবং ধৈর্য। তাহলে আপনি এই পেশায় সফলতা অর্জন করতে পারবেন। বিস্তারিত জেনে নিন আমাদের আজকের লেখাটি সম্পূর্ণ পড়ে।

প্রথম এনিমেশন কবে তৈরি হয়

প্রথম অ্যানিমেশনগুলি উনিশ শতকের শেষের দিকে এবং বিশ শতকের শুরুতে তৈরি করা হয়েছিল বলে তথ্য পাওয়া যায়। সম্প্রতি, এটি সাধারণত জানা যায় যে উন্মত্ত চিত্রশিল্পী এবং প্রকৌশলী এমিলি-চার্লস রেমন্ড সাকাত প্রাথমিক অ্যানিমেটেড চলচ্চিত্রের জন্য প্রয়োজনীয় এবং অপেক্ষাকৃত নতুন অ্যানিমেশন ডিভাইস তৈরি করেছিলেন। তাদের মধ্যে একটি হল 'দ্য প্রজেকশন অফ আ চুক' (একটি চুকের অভিক্ষেপ) যা ১৯০৮ সালে তৈরি হয়েছিল।
এছাড়াও, ১৯৭১ সালে আইরিশ অ্যানিমেটর হাওয়ার্ড ফোরলে আর্মস্ট্রং তার 'প্রিন্স অল্ড এবং প্রিন্সেস অল্ড' অপারেটিভ প্রজেক্টর দিয়ে প্রথম হতাশা জনক অ্যানিমেশন ফিল্ম তৈরি করেছিলেন। এবং ২০ শতকের গোড়ার দিকে অ্যানিমেশন ফিল্ম তৈরিতে আরও বেশ কিছু অগ্রগতি দেখা যায়, যার মধ্যে সাম্প্রতিক জনপ্রিয় ছিল 'স্টিমসন' এবং 'ফ্লিপ বুক' স্টুডিওগুলির কাজ।

এনিমেশন প্রধানত কত প্রকার ও কি কি

এনিমেশন একটি শিল্প বা প্রযুক্তি যা চলচ্চিত্র, ভিডিও গেম, টেলিভিশন, ওয়েব সাইট ইত্যাদির মাধ্যমে চলচ্চিত্র বা ভিডিও ক্লিপ তৈরি করার জন্য ব্যবহৃত হয়। এবং এর মাধ্যমে চলচ্চিত্র, গেম বা অন্যান্য বস্তু, চরিত্র, ও স্থাপনাগুলির গতিময় চলচ্চিত্র তৈরি করা হয়েছিল।
এনিমেশন প্রধানত  চার প্রকার তা হলো;

১. 2D এনিমেশনঃ এটি দুই ভাবে একই নিয়ম অনুযায়ী একটি বস্তুর ছবি তৈরি করে তারপর ছবিগুলো সারিসারি একে অপরের সাথে পরিবর্তন দিয়ে থাকে যাতে ছবিগুলো চলচ্চিত্রের মত দেখায়।

২. 3D এনিমেশনঃ এখানে বস্তু, চরিত্র, ও স্থাপনাগুলি তিন ভাবে বা তার বেশি মাত্রায় তৈরি করা হয় যা তিন ভাবে দেখায়। তাদের গতিময় ছবিগুলি একত্রে সংযোজন করে 3D চলচ্চিত্র তৈরি করা হয়।

৩. স্টপ-মোশন এনিমেশনঃ এটি ছবির প্রতিটি ফ্রেমে বস্তুর স্থানান্তর করা হয় এবং প্রতি ফ্রেম একটি ফটোগ্রাফ তৈরি করে যা তারপর একত্রিত হয় যাতে তা চলচ্চিত্রর মতো দেখায়।

৪. কম্পিউটার জেনারেটেড ইমেজারিঃ এটি কম্পিউটারে তৈরি বা সিমুলেট করা হয়। যা বস্তু, চরিত্র, বা সময়ের সাথে বাস্তবতা যুক্ত করে যা সেগুলি চলচ্চিত্রে ছবিগুলি তৈরি করতে ব্যবহৃত হয়।

এই চার ধরণের অ্যানিমেশন ব্যবহার করে বিভিন্ন ধরণের চলচ্চিত্র, গেম, শিক্ষামূলক প্রোগ্রাম, বিজ্ঞান, ও বিনোদনের সাথে সম্পর্কিত বিভিন্ন প্রকল্প ও প্রতিষ্ঠান তৈরি করা হয়।

এনিমেশন ভিডিও তৈরির সফটওয়্যার

এনিমেশন ভিডিও তৈরি করার জন্য কিছু সফটওয়্যার রয়েছে যা ব্যবহার করা যায়। এনিমেশন তৈরি করার জন্য কিছু জনপ্রিয় সফটওয়্যার সম্পর্কে বিস্তারিত নিচে তুলে ধরা হলো।

Adobe Animate: এটি বেশিরভাগ প্রোফেশনাল এনিমেশন তৈরি করার জন্য ব্যবহৃত হয়। এটি ভেক্টর এনিমেশন, চরিত্র এনিমেশন, এবং অন্যান্য প্রকারের এনিমেশন তৈরি করতে ব্যবহার করা হয়।

Toon Boom Harmony: এটি একটি বেশ জনপ্রিয় প্রোফেশনাল এনিমেশন সফ্টওয়্যার, যা 2D এনিমেশনের জন্য ব্যবহার করা হয়। এটি চিত্র গল্প, টেলিভিশন প্রোগ্রাম, ছোটদের শিক্ষামূলক অনুষ্ঠান ইত্যাদি তৈরি করতে ব্যবহৃত হয়।

Blender: এটি একটি ওপেন সোর্স 3D গ্রাফিক্স সফ্টওয়্যার, যা 3D মডেলিং, এনিমেশন, রিগিং, ইত্যাদি কাজ করার জন্য ব্যবহৃত হয়ে থাকে।

Cinema 4D: এটি একটি প্রোফেশনাল 3D গ্রাফিক্স সফ্টওয়্যার যা এনিমেশন, মডেলিং, টেক্সচারিং, ইত্যাদি কাজ করার জন্য ব্যবহৃত হয়।

Moho (Anime Studio): এটি 2D এনিমেশন এবং রিগিং সম্পর্কিত সফটওয়্যার। এটি চিত্র গল্প, এনিমেটেড সিরিজ, ভিডিও গেম ইত্যাদি তৈরি করার জন্য ব্যবহার করা হয়।

এই সফটওয়্যারগুলির ব্যবহারের জন্য প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ এবং অভিজ্ঞতা সম্পর্কে নির্দিষ্ট সংস্থা বা টিউটোরিয়াল পাওয়া যায়। সাধারণভাবে, এই সফটওয়্যারগুলি ব্যবহার শেখার জন্য অনলাইনে বিভিন্ন টিউটোরিয়াল রয়েছে যা আপনারা চাইলে খুব সহজে এসব প্লাটফর্ম থেকে শিখতে পারবেন।

এনিমেশন ভিডিও কিভাবে বানাবো

এনিমেশন ভিডিও তৈরি করার জন্য কিছু পদক্ষেপ আছে যা অনুসরণ করে এনিমেশন ভিডিও বানাতে পারবেন। এনিমেশন তৈরি করার জন্য কিছু পদ্ধতি রয়েছে যার সম্পর্কে নিচে তুলে ধরা হলো।

বিষয় নির্ধারণঃ আপনার এনিমেশন ভিডিওর জন্য কী ধরনের বিষয়ে আপনি কাজ করতে চান তা নির্ধারণ করুন। যেমন- চিত্র গল্প, স্কেচ, চরিত্র এনিমেশন, বিজ্ঞান প্রকল্প, সংগীত ভিডিও ইত্যাদি হতে পারে।

কাহিনী বা স্ক্রিপ্টঃ আপনার এনিমেশন তৈরীর জন্য একটি কাহিনী বা স্ক্রিপ্ট তৈরি করুন। যা আপনার প্রোজেক্টের মূল ভাবার উপর নির্ভর করবে।

চরিত্র ডিজাইন এবং ব্যবস্থাপনাঃ আপনার এনিমেশনের জন্য চরিত্রগুলির ডিজাইন করুন এবং সেগুলি কীভাবে স্কীনে ব্যবস্থাপনা করা হবে তা নির্ধারণ করুন।

এনিমেশন তৈরি করাঃ এনিমেশন তৈরি করার জন্য আপনি পছন্দ অনুযায়ী এনিমেশন সফ্টওয়্যার ব্যবহার করতে পারেন। চিত্র, সম্পাদনা, অ্যানিমেশন এবং অডিও যুক্ত করার মাধ্যমে এনিমেশন তৈরি করা যায়।

অডিও যোগ করুনঃ যদি প্রয়োজন হয় আপনি অডিও যোগ করতে পারেন যা আপনার এনিমেশন উচ্চমাত্রায় নিয়ে যেতে সাহায্য করতে পারে।

পোস্ট-প্রোডাকশন এবং সম্পাদনাঃ এনিমেশন তৈরি করার পর অডিও, ছবি বা অন্যান্য মিডিয়ার সংযোজন, সম্পাদনা এবং ফাইনাল প্রোডাক্ট তৈরি করতে পর্যাপ্ত সময় দিন।

শেয়ার এবং প্রচার করুনঃ আপনার তৈরি করা এনিমেশন ভিডিও শেয়ার করুন এবং প্রচার করুন যাতে অন্যরা খুব সহজেই দেখতে পারে এবং আপনার কাজ দেখে মন্তব্য করতে পারে।

এনিমেশন ভিডিও তৈরি করে ইনকাম

আপনি এনিমেশন ভিডিও তৈরি করে অনলাইনে ইনকাম করতে পারবেন। তবে এটি প্রাথমিকভাবে সম্পূর্ণ নিশ্চিত নয় যে আপনি কি পরিমাণ টাকা উপার্জন করতে পারবেন। যদি সঠিকভাবে ধৈর্য ধরে কাজ করেন তাহলে আপনার সফলতা আসবেই।তাহলে চলুন জেনে নেই, কিভাবে এনিমেশন ভিডিও তৈরি করে ইনকাম করতে পারবেন।
ভিডিও আপলোড করুনঃ YouTube, Vimeo, Dailymotion ইত্যাদি এর মতো ভিডিও হোস্টিং সাইটে আপনার এনিমেশন ভিডিও আপলোড করুন। ভিডিও দেখানোর সাথে সাথে আপনি YouTube এর মাধ্যমে আপনার চ্যানেলে অ্যাড প্রদান করতে পারেন এবং ভিডিও দেখানোর জন্য পেই-পার-ভিউ মডেল ব্যবহার করতে পারেন।

ভিডিও ট্র্যাফিক প্রাপ্তি করুনঃ ভিডিও দেখানোর জন্য আপনার চ্যানেলে দর্শকদের আকর্ষণ করার জন্য আপনার এনিমেশন ভিডিও সম্পর্কে মার্কেটিং করুন। মার্কেটিং প্রচেষ্টা করে সঠিক দর্শকদের আপনার চ্যানেলে আকর্ষিত করা যেতে পারে।

এডসেন্স/এডভার্টাইজিং থেকে ইনকামঃ YouTube এ ভিডিও দেখানোর সময় আপনি Google AdSense বা অন্যান্য বিজ্ঞাপন প্লাটফর্মের সাথে যোগাযোগ করে আপনার ভিডিও থেকে ইনকাম করতে পারবেন।

স্পন্সরশিপ এবং প্রচারঃ আপনি আপনার ভিডিও এর জন্য স্পন্সরশিপ অনুমোদন করে প্রচার করতে পারেন এবং এর বিপরীতে আপনি পেমেন্ট পাবেন।

এনিমেশন ভিডিও তৈরি করা এবং তা থেকে ইনকাম করার জন্য আপনাকে মনোযোগ সহ চেষ্টা এবং ধৈর্য ধরে কাজ করার ইচ্ছা থাকতে হবে। ভিডিও তৈরির জন্য পরিশ্রম, মার্কেটিং প্রচেষ্টা এবং প্রচার সাধারণভাবে আপনাকে সঠিক পাবলিসিটি এবং সম্প্রচার প্ল্যাটফর্মে আপনার ভিডিও প্রদর্শন করে তাদের আকর্ষিত করতে সাহায্য করে।

শেষ কথা

বর্তমানে এনিমেশন ভিডিওর জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ পেশায় অগণিত ছেলেমেয়েরা অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে। যার ফলে তারা খুব সহজে ইনকাম করতে পারছে এবং বেকারত্ব নামক যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাচ্ছে। আপনারা চাইলে এই প্রফেশনে আসতে পারেন। তবে তার জন্য প্রয়োজন কঠোর পরিশ্রম এবং ধৈর্য্য। আশা করছি, এনিমেশন ভিডিও সম্পর্কিত আমাদের আজকের লেখাটি পড়ার মাধ্যমে উপকৃত হতে পারবেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ড্রিমসসেফ আইটিির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url