পুলিশ ভেরিফিকেশন করার নিয়ম - ২০২৪

আজকে আমরা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় পুলিশ ভেরিফিকেশন নিয়ে আলোচনা করবো। আমাদের মধ্যে অনেকে আছেন যারা ভেরিফিকেশন সম্পর্কে সঠিক তথ্য না জানার কারণে বিভিন্ন দ্বিধা দ্বন্দ্বে পড়তে হয়। আর এজন্যই আজকে আমরা পুলিশ ভেরিফিকেশন সম্পর্কে বিস্তারিত এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আলোচনা করবো।
পুলিশ ভেরিফিকেশন করার নিয়ম - ২০২৪
বাংলাদেশ পুলিশের বিভিন্ন সেবার মধ্য অন্যতম সেবা হল পুলিশ ভেরিফিকেশন। একজন নাগরিকের বিভিন্ন কাজে এই পুলিশ ক্লিয়ারেন্স এর প্রয়োজন পড়ে। যা নাগরিকদের পুলিশ প্রশাসন এই সেবা দিয়ে থাকেন।

পুলিশ ভেরিফিকেশন কি

পুলিশ ভেরিফিকেশন হচ্ছে একজন নাগরিকের দাপ্তরিক ক্ষেত্রে দেওয়া সকল তথ্য তথা বিভিন্ন চাকরির ক্ষেত্রে, লাইসেন্স এবং অন্য যেকোনো প্রয়োজনের ক্ষেত্রে আবেদনকারীর প্রদত্ত তথ্যগুলো সঠিক আছে কিনা তা পুলিশ কর্তৃক যাচাই-বাছাই করাকেই মূলত পুলিশ ভেরিফিকেশন বলা হয়ে থাকে। এছাড়াও প্রার্থীর এই তথ্যগুলো সত্যতা যাচাইয়ের পাশাপাশি চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য ও সামাজিক অবস্থান সম্পর্কেও তথ্য নিয়ে থাকেন। যে সব ক্ষেত্রে পুলিশ ভেরিফিকেশনের প্রয়োজন পড়ে তা হলঃ
  • চাকরির ক্ষেত্রে।
  • বিভিন্ন ধরনের লাইসেন্স এর ক্ষেত্রে।
  • পাসপোর্ট এর ক্ষেত্রে। এছাড়াও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার ক্ষেত্রেও প্রয়োজন হতে পারে।

পুলিশ ভেরিফিকেশন করতে কি কি কাগজ লাগে

পুলিশ ভেরিফিকেশন করতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র প্রয়োজন হয় যা অনেকেরই জানা নেই। বিশেষ করে যারা নতুন পুলিশ ভেরিফিকেশন আবেদন করতে চায় তাদের জন্য অনেক সমস্যা হয়। তাহলে চলুন জেনে নেই, পুলিশ ভেরিফিকেশন করতে যেসব কাগজপত্রের প্রয়োজন হয় তা হলঃ

চাকরির ক্ষেত্রেঃ
  • শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ ও মার্কশিট।
  • জাতীয় পরিচয় পত্র ও নাগরিক সনদ।
  • পাসপোর্ট সাইজের ছবি।
  • বাবা-মার জাতীয় পরিচয় পত্র।
  • অভিজ্ঞতার সনদপত্র যদি থাকে।
  • মোবাইল নাম্বার।
এছাড়াও আপনার স্থায়ী ঠিকানা জানার জন্য অনেক ক্ষেত্রে যাচাই করার জন্য আপনার জমির দলিল ও বিদ্যুৎ বিলের কাগজ এর প্রয়োজন পড়তে পারে।

পাসপোর্ট এর ক্ষেত্রেঃ
  • আবেদনকারীর জাতীয় পরিচয় পত্র অথবা জন্ম নিবন্ধন।
  • নাগরিকত্ব সনদ।
  • পিতা-মাতার জাতীয় পরিচয় পত্র। যদি আবেদনকারী মহিলা হয় তাহলে স্বামীর জাতীয় পরিচয় পত্র।
  • বিদ্যুৎ বিল, পানি বিল, গ্যাস বিল এর কপি।
  • যদি ভাড়া বাসায় থাকেন তাহলে বাসা ভাড়ার চুক্তিপত্র।
  • যদি আপনার আগে কোন মামলা থেকে থাকে তাহলে সেই মামলা হয়েছে এই মর্মে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র। এবং 
  • মোবাইল নাম্বার।
লাইসেন্সের ক্ষেত্রেঃ
  • শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ।
  • জাতীয় পরিচয় পত্র।
  • পাসপোর্ট সাইজের ছবি।
  • বিদ্যুৎ বিলের কপি।
  • মোবাইল নাম্বার।
উপরিউক্ত ডকুমেন্ট যদি আপনার ঠিক থাকে তাহলে আপনি আবেদন করতে পারবেন।

পুলিশ ভেরিফিকেশন করার নিয়ম

একজন নাগরিকের বিভিন্ন ক্ষেত্রে পুলিশ ভেরিফিকেশন করার প্রয়োজন হয়। এই পুলিশ ভেরিফিকেশন কিভাবে করবেন বা করার নিয়ম কি সে সম্পর্কে সঠিক ধারণা রাখতে হবে। আমাদের মধ্যে অনেকেই রয়েছে যাদের পুলিশ ভেরিফিকেশন করার প্রয়োজন হয় কিন্তু সে সম্পর্কে সঠিক ধারণা না থাকার কারণে অনেক সময় চিন্তিত হয়ে পড়ে। তাই আমরা আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে জানবো কিভাবে পুলিশ ভেরিফিকেশন করতে হয় বা কি কি পদ্ধতি অনুসরণ করতে হয়। 

এখন প্রশ্ন হল পুলিশ ভেরিফিকেশন আপনি কোথায় থেকে করবেন? স্থায়ী ঠিকানা থেকে করবেন না অস্থায়ী ঠিকানা থেকে দুই ঠিকানার মাধ্যমে আপনি পুলিশ ভেরিফিকেশন আবেদন করতে পারবেন। এতে কোন সমস্যা হবে না। এখন চলুন, আবেদন করার নিয়ম গুলো কি কি তা জেনে নেই।

প্রথম ধাপঃ পুলিশ ভেরিফিকেশনের আবেদন করার জন্য আপনাকে pcc@police.gov.bd এই ওয়েবসাইটে ক্লিক করতে হবে।

দ্বিতীয় ধাপঃ pcc@police.gov.bd এই ওয়েবসাইটে লগ-ইন করুন। এরপর Apply Menu তে ক্লিক করে আবেদনটি পূরণ করতে হবে।

তৃতীয় ধাপঃ এখন আবেদন ফরম এর প্রথম ধাপে ব্যক্তিগত বিস্তারিত তথ্য দিতে হবে এবং দ্বিতীয় ধাপে বর্তমান ঠিকানা ও স্থায়ী ঠিকানা দিয়ে পূরণ করতে হবে। গুরুত্বপূর্ণ কথা হল আপনি যে বর্তমান ঠিকানা যে জেলা বা আপনি যে মেট্রোপলিটন অবস্থিত সেই ঠিকানায় পুলিশ ভেরিফিকেশন সম্পন্ন হবে।

চতুর্থ ধাপঃ তৃতীয় ধাপে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের স্ক্যান কপি আপলোড করতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে স্ক্যান কপিটি যেন পরিষ্কার হয় এবং এর সাইজ থাকতে হবে ১৫০ কিলোবাইট এর কম।

পঞ্চম ধাপঃ পূর্বে আপনি যেসব তথ্য দিয়েছেন তা পুনরায় উপস্থাপন করা হবে। এবং সকল তথ্য ঠিক আছে কিনা ভালোভাবে যাচাই করতে হবে। যাচাই-বাছাই করা সম্পন্ন হলে সাবমিট করতে হবে।

ষষ্ঠ ধাপঃ এখন আবেদন ফ্রি প্রদান করার জন্য PCC ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে My Account এ ক্লিক করলে Dashboard আসবে এই Dashboard থেকে 'Pending for Payment' এ ক্লিক করলে নেক্সট প্রক্রিয়ায় যেতে পারবেন।

আপনি পুলিশ ভেরিফিকেশনের ফি ২ ভাবে দিতে পারবেন। একটি হচ্ছে অনলাইন ডেবিট কার্ড অথবা ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে ফ্রি প্রদান করতে পারবেন। আবার বাংলাদেশ ব্যাংক অথবা সোনালী ব্যাংকের যে কোন শাখা থেকে ৫০০ টাকা মূল্যের ট্রেজারি চালান এর মাধ্যমে।

এই চালানের তথ্যগুলো ইনপুট করার সময় যেসব তথ্যগুলো ইনপুট করতে হবে তা হচ্ছে ব্যাংক নাম, জেলা,ব্যাংক বাঞ্চ, চালান তারিখ, এবং স্ক্রল নাম্বার। এসব তথ্য দেওয়ার পর তা 'Check Chalan' এ ক্লিক করার পর চালান কপির একটি পরিষ্কার ছবি আপলোড করুন। খেয়াল রাখতে হবে ছবির সাইজ যেন সর্বোচ্চ ৩০০ কিলোবাইট হয়।

পুলিশ ভেরিফিকেশন করতে কত টাকা লাগে

অনেকে ভেবে থাকেন পুলিশ ভেরিফিকেশন করতে অনেকের হেল্পের প্রয়োজন হয় বা অনেক টাকা লাগতে পারে। কিন্তু এই ধরনের কথা সম্পন্ন ভিত্তিহীন। পুলিশ ভেরিফিকেশন আপনি ঘরে বসে নিজেই আবেদন করতে পারবেন। এছাড়াও আপনি সরাসরি থানায় গিয়ে আবেদন করতে পারবেন। তার জন্য আপনাকে শুধুমাত্র ৫০০ টাকা ফ্রি প্রদান করতে হবে। আর যদি কেউ পুলিশ ভেরিফিকেশন এর জন্য বাড়তি ফি নিতে চাই তাহলে আপনি আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেন।

পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট ডেলিভারি সময়

পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট ডেলিভারির সময় সাধারণত নির্ভর করে কত জায়গায় পুলিশ ভেরিফিকেশন করতে হয় তার উপর। যদি আপনার থানা অধীনস্থ এলাকার ভেরিফিকেশন করতে হয় তাহলে সর্বনিম্ন ৩ দিনের মধ্যেই তদন্ত সম্পন্ন করতে হয়। 

আর যদি আবেদনকারীর বা প্রার্থীর স্থায়ী ও অস্থায়ী ঠিকানা ভিন্ন জেলায় হয় এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও চাকরির প্রতিষ্ঠানও যদি ভিন্ন জেলায় হয় সেক্ষেত্রে ১৫ দিন বা তারও অধিক সময় লাগতে পারে। এই তথ্যগুলো সম্পন্ন পুলিশ ক্লিয়ারেন্স এর আইন অনুযায়ী। যদি এর বেশি সময় লাগে তাহলে বুঝবেন কাজের ক্ষেত্রে কোন অনিহা রয়েছে।

পুলিশ ক্লিয়ারেন্স রিজেক্ট হলে করনীয়

অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় পুলিশ ক্লিয়ারেন্স রিজেক্ট বা বাতিল হলে তখন কি করবেন বা আপনার করণীয় কি? অনেকে আছেন যারা পরবর্তী ধাপ সম্পর্কে অবগত নয়। কি করতে হবে তখন অনেক চিন্তিত হয়ে পড়ে। চিন্তার কোন বিষয় নেই শুধু সে সম্পর্কে সঠিক ধারণা বা পদ্ধতি জানতে হবে। পুলিশ ক্লিয়ারেন্স রিজেক্ট হওয়ার অনেকগুলো কারণ রয়েছে। 

আপনাকে আগে জানতে হবে আপনার কি কারনে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স রিজেক্ট হয়ে গেছে। যেসব সমস্যার কারণে আপনার পুলিশ ভেরিফিকেশন বাতিল হয়েছে আপনাকে সে সব সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে সংশোধন করার মাধ্যমে পুনরায় পুলিশ ভেরিফিকেশনের জন্য আবেদন করতে হবে।

শেষ কথা

প্রিয় পাঠক, আজকে আমরা পুলিশ ভেরিফিকেশন সম্পর্কে বিস্তারিত জেনেছি। তাই আশা করছি যখন আপনার পুলিশ ভেরিফিকেশন করার প্রয়োজন হবে তখন কি কি প্রয়োজনীয় কাগজপত্র প্রয়োজন হয়, পুলিশ ভেরিফিকেশন করার নিয়ম এবং কতদিন সময় লাগে তা সম্পর্কে আজকের আর্টিকেল পড়ার মাধ্যমে আপনার কাজ করতে সহজ হবে। অন্যান্য সকল তথ্য পেতে ড্রিমসসেফ আইটির সাথেই থাকুন। ধন্যবাদ!

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ড্রিমসসেফ আইটিির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url