১৬ ডিসেম্বর কি দিবস জেনে নিন

পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহারের ইতিহাস সম্পর্কে  বিস্তারিত জানুনপ্রিয় পাঠক, আমাদের ঐতিহাসিক ১৬ই ডিসেম্বর সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন? তাহলে আরো জানুন ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ এর ইতিহাস, ১৬ ডিসেম্বর কি দিবস ও বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস ও বিজয় দিবসের মধ্যে পার্থক্য কি? বিস্তারিত জানুন ১৬ ডিসেম্বর কি দিবস এই আর্টিকেলটি পড়ে।
১৬ ডিসেম্বর কি দিবস জেনে নিন
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সম্পর্কে প্রতিটি নাগরিকের জানা উচিত। কেননা এই দিনকে কেন্দ্র করে জড়িয়ে আছে আমাদের বাঙালি জাতির রক্ত, ত্যাগ, সাহসের গল্প। যা ইতিহাসের পাতায় আজীবন লেখা থাকবে। বিস্তারিত ১৬ ডিসেম্বর কি দিবস আর্টিকেলের মাধ্যমে জেনে নেই।

১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর কি বার ছিল

বাংলাদেশ রাষ্ট্র হিসেবে সারাদেশে বিজয় দিবস পালিত হয়। বাংলাদেশের অনেক পাবলিক পরীক্ষায় এই প্রশ্ন করা হয় যে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর কোন সময় ছিল। তাই যেকোনো পরীক্ষায় ভালো করতে হলে এই প্রশ্নের উত্তর জানতে হবে। তাহলে জেনে নিন কোন সময়টা ছিল ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১। প্রতি বছর ১৬ ডিসেম্বর দেশের বিভিন্ন স্থানে নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে বিজয় দিবস পালিত হয়। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর ছিল বৃহস্পতিবার। বৃহস্পতিবার ছিল ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী আত্মসমর্পণের দিন।

১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস বক্তব্য

১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশে বিজয় দিবস হিসাবে পালিত হয়। ১৯৭১ সালের বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অর্জিত বিজয়কে স্মরণ করে।

সম্মানিত অতিথিবৃন্দ ও প্রিয় দেশবাসী,
আজ যখন আমরা বিজয়ের পবিত্র মাটিতে দাঁড়িয়ে আছি, আমরা স্মরণ করি আমাদের পূর্বপুরুষ ও মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্ব, ত্যাগ ও অটুট চেতনা যারা আমাদের প্রিয় জাতির স্বাধীনতার জন্য সাহসিকতার সাথে লড়াই করেছিলেন। ১৬ ডিসেম্বর আমাদের ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় চিহ্নিত করে - আমাদের দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের জন্য অগণিত মানুষের রক্ত, ঘাম এবং অশ্রু দ্বারা চিহ্নিত ছিল একটি দিন। 

৫২ বছর আগে এই দিনে স্বৈরাচার ও নিপীড়নের শৃঙ্খল থেকে মুক্ত হয়ে স্বাধীন ও সার্বভৌম জাতি হিসেবে বাংলাদেশের আত্মপ্রকাশ ঘটে। এই বিজয়ের যাত্রা সহজ ছিল না। দেশকে মুক্ত করতে অনেক চ্যালেঞ্জ , ত্যাগ এবং অত্যাধিক সাহসের মুখোমুখি হতে হয়েছিল। ভবিষ্যত প্রজন্ম যাতে স্বাধীনতা ও মর্যাদায় বাংলার মাটিতে শ্বাস নিতে পারে তা নিশ্চিত করার জন্য আত্মত্যাগ করেছিলেন। এজন্য বাংলাদেশ যতদিন থাকবে ইতিহাসের পাতায় তাদের নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।

আমরা শ্রদ্ধা জানাই সেইসব বীর আত্মাদের প্রতি যারা জীবন বাজি রেখে স্বাধীনতার ডাকে অগ্রসর হয়েছিলেন। তাদের অসীম সাহসিকতা, ঐক্য আমাদের সকলের জন্য অনুপ্রেরণার হিসেবে কাজ করবে।আসুন আমরা বিজয় দিবস উদযাপন করি, এবং গণতন্ত্র, ন্যায়-নীতি ও আদর্শ হিসেবে দেশ গড়ার লক্ষ্যে কাজ করি। যে আদর্শের উপর আমাদের জাতি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। 

আসুন আমরা অর্জিত স্বাধীনতা রক্ষার অঙ্গীকার করি, বাংলাদেশের অগ্রগতি ও সমৃদ্ধির জন্য আমাদের কর্ম ও ত্যাগের মাধ্যমে আমাদের বীরদের আত্মত্যাগকে সম্মান জানাই। আজ আমরা আমাদের অতীতের অর্জনগুলি উদযাপন করি। আমরা সামনের দিনগুলো নিয়ে চিন্তাভাবনা করি। আমাদের অবশ্যই হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করতে হবে। ধর্ম, বর্ণ ও সংস্কৃতির বাধা অতিক্রম করে এমন একটি জাতি গড়ে তুলতে হবে। 

যেখানে প্রতিটি নাগরিকের সমান সুযোগ ও অধিকার থাকবে, এবং যেখানে শান্তি ও সম্প্রীতি বিরাজ করবে। আসুন আমরা স্মরণ করি যে ঐক্যের চেতনা যে আমাদের ১৯৭১ সালে বিজয়ের দিকে নিয়ে গিয়েছিল তা আমাদের শক্তির ভিত্তি হিসাবে রয়ে গেছে। এই ঐক্যকে কাজে লাগিয়ে আমরা আমাদের দেশের অগ্রগতির পথে যেকোন বাধা অতিক্রম করতে দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ হয়ে এগিয়ে যাবো।

এই শুভ উপলক্ষ্যে, আমি আমাদের সমস্ত সশস্ত্র বাহিনী, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এবং আমাদের সার্বভৌমত্ব রক্ষা এবং আমাদের স্বাধীনতা অক্ষুন্ন রাখতে যারা অক্লান্ত অবদান রেখেছে এমন প্রত্যেক ব্যক্তিকে আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাই। স্বাধীনতা, ন্যায়বিচার ও ঐক্যের নীতি আমাদেরকে আরও উজ্জ্বল ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশের দিকে পরিচালিত করুক। বাংলাদেশ দীর্ঘজীবী হোক! ধন্যবাদ।

১৬ ডিসেম্বর নিয়ে কিছু কথা

১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস। বাঙালি জাতির ইতিহাসে এক গৌরবময় দিন। ১৯৭১ সালের এই দিনে মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম নেতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বাঙালি বিজয় অর্জন করে। বাঙালি জাতির ইতিহাস হাজার বছরের পরাধীনতার ইতিহাস। দীর্ঘ সংগ্রাম ও আত্মত্যাগের মাধ্যমে ভারতীয় উপমহাদেশ ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন থেকে স্বাধীন হলেও স্বাধীনতা ও আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার এ ভূখণ্ডের বাঙালিদের কাছে আসেনি।

১৯৭১ সালে, দ্বি-জাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে ভারত বিভক্ত হয় এবং পূর্ব বাংলার সাথে পাকিস্তান নামে একটি রাষ্ট্র তৈরি করা হয়। তখন থেকেই পাকিস্তানের শাসক শ্রেণী বাঙালিদের ওপর জুলুম, শাসন, শোষণ ও নির্যাতন শুরু করে। বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা, বাংলাদেশের স্থপতি, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে নিরন্তর আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ১৯৭১ সালে জাতি অর্জিত হয়। 

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের অন্ধকার রাতে আধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বাঙালি জাতিকে আক্রমণ করে গণহত্যায় লিপ্ত হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২৬ মার্চ ভোরে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। শুরু হয় রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধ। বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে পাকিস্তানে বন্দী করা হয়। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অনুপস্থিতিতে বাংলাদেশ সরকারের অধীনে ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধে জয়লাভ করে তাকে রাষ্ট্রপতি করা হয়।

এই বিজয় অর্জনের মাধ্যমে বিশ্বের মানচিত্রে আবির্ভূত হয় স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ রাষ্ট্র।মুক্তিযুদ্ধে ৩ লাখ শহীদ ও ২ লাখ মা-বোনের আত্মত্যাগে অর্জিত হয়েছে এই বিজয়। কোটি বাঙালির আত্মত্যাগ ও বীরত্বপূর্ণ কর্মকাণ্ডে বাঙালি জাতি পরাধীনতার অভিশাপ থেকে মুক্তি পেয়েছিল। বাঙালির ইতিহাসের অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের মাধ্যমে বাঙালি জাতিকে মুক্তির আকাঙ্ক্ষায় উজ্জীবিত করে।

এবং স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের পথে এগিয়ে যান। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৫৪ যুক্তফ্রন্টের নির্বাচনে বিজয়, ১৯৫৬ সালের সংবিধান আন্দোলন, ১৯৫৮-সামরিক আইন আন্দোলন, ১৯৬২ শিক্ষা কমিশন বিরোধী আন্দোলন, ১৯৬৬ বাঙালির মুক্তির সনদ ছয় দফা আন্দোলন, ১৯৬৮ সালে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগ সাধারণ নির্বাচন কমিশনার। এ সকল আন্দোলনের নেতৃত্বে ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

এরপর ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বঙ্গবন্ধুর সেই বিখ্যাত ভাষণ, 'এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম' যার যা কিছু আছে তাকে তাই নিয়ে মোকাবেলা করতে হবে। তিনি পাকিস্তানি শাসকশ্রেণির বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধে বাঙালি জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন। অসহযোগ আন্দোলনের বহু ঘটনার মধ্যে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাঙালি জাতি স্বাধীনতা অর্জনের চূড়ান্ত লক্ষ্যে ঐক্যবদ্ধ হয়। 

২৬শে মার্চ ভোররাতে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করলে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে বাঙালি জাতি তার আহ্বানে সাড়া দিয়ে সশস্ত্র সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ে। বাঙালির এই মুক্তিযুদ্ধে পাশে দাঁড়িয়েছিল পাশের দেশ ভারত, সমাজতান্ত্রিক সোভিয়েত ইউনিয়নসহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রগতিশীল দেশের সরকার ও মুক্তিকামী মানুষ। তবে কিছু পরাশক্তি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সরাসরি বিরোধিতা করে এবং পাকিস্তানকে পূর্ণ সমর্থন জানায়। 

শত প্রতিকূলতা অতিক্রম করে বাঙালি মুক্তিযুদ্ধে দ্রুত অগ্রসর হয়। ৯ মাস রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধের পর, হানাদার পাকিস্তানি বাহিনী ১৬ ডিসেম্বর ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে (তৎকালীন রেসকোর্স ময়দান) জোট বাহিনীর কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণ করে। এর মাধ্যমে বাঙালির চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হয়।

১৬ ডিসেম্বর কি দিবস

বাঙালির গৌরব, বীরত্ব ও আত্মত্যাগের গৌরবময় অর্জন মুক্তিযুদ্ধের বিজয় দিবস আজ। আজ ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শেষে বিজয় অর্জন করে বীর বাঙালিরা। ঢাকার ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বর্বর, ঘাতক বাহিনী তাদের অস্ত্র ফেলে দেয় এবং আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়। বিশ্বের মানচিত্রে আজ লাল-সবুজের পতাকা স্থান করে নেওয়ার দিন। এই পতাকা ও মানচিত্রের জন্য জীবন উৎসর্গকারী বীর সন্তানদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের মাধ্যমেই এই দিবসের মহিমা প্রকাশ পাবে।

১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ এর ইতিহাস

৯ মাস রক্তক্ষয়ী সশস্ত্র যুদ্ধের পর ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাঙালি জাতি মুক্তিযুদ্ধে বহুল প্রতীক্ষিত বিজয় অর্জন করে। এই বিজয়ের মধ্য দিয়ে পূর্ব বাংলার বিশাল জনগণ পৃথিবীর মানচিত্রে বাংলাদেশ নামে একটি নতুন দেশের জন্ম দেয়। হাজার হাজার মানুষের ‘জয় বাংলা’ স্লোগানে ঢাকায় আবেগঘন পরিবেশ সৃষ্টি হয়। পরাজিত পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল আমির আবদুল্লাহ খান নিয়াজী মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় বাহিনীর যৌথ বাহিনীর প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরার কাছে তার অস্ত্র ও সৈন্য সমর্পণ করেন।

এবং আত্মসমর্পণে স্বাক্ষর করেন। নথি মুক্তিবাহিনীর প্রতিনিধিত্ব করেন বাংলাদেশ বাহিনীর ডেপুটি গ্রুপ ক্যাপ্টেন এ কে খন্দকার। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও মুক্তিবাহিনীর পক্ষ থেকে এস ফোর্স কমান্ডার লেফটেন্যান্ট কর্নেল কে এম সফিউল্লাহ, ২ নং সেক্টরের কমান্ডার মেজর এটিএম হায়দার, কাদের সিদ্দিকীসহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন। এর আগে নিয়াজির নির্দেশে পাকিস্তানি বাহিনী ভোর পাঁচটা থেকে যুদ্ধবিরতি শুরু করে। 

সকাল সাড়ে ৮টার দিকে ভারতীয় সেনাবাহিনীর বিভাগীয় কমান্ডার মেজর জেনারেল গন্ধর্ব সিং নাগরাকে বহনকারী একটি সামরিক জিপ ঢাকার মিরপুর ব্রিজের কাছে থামে। ভারতীয় ও বাংলাদেশ বাহিনীর দুই সেনা কর্মকর্তা নিয়াজির জন্য নাগরার বার্তা নিয়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পূর্ব সদর দফতরের দিকে সাদা পতাকা উড়িয়ে একটি জিপে রওনা হন। বার্তায় লেখা ছিল, 'প্রিয় আবদুল্লাহ, আমি এখন মিরপুর ব্রিজে আছি। আপনার প্রতিনিধি পাঠান।'

এর আগে নিয়াজি ঢাকায় মার্কিন কনস্যুলার অফিসে নিযুক্ত মিলিটারি অ্যাটাশেকে ভারতকে যুদ্ধবিরতি ও নিরস্ত্রীকরণ সম্পর্কে আনুষ্ঠানিকভাবে অবহিত করার জন্য অনুরোধ করেছিলেন। দিল্লিতে মার্কিন দূতাবাসের মাধ্যমে ভারত সরকারকে জানানো হয়েছিল। বেলা ১১টার দিকে যৌথ বাহিনীর দুজন প্রতিনিধি নিয়াজির সদর দফতর থেকে ফিরে আসেন। মেজর জেনারেল জামশেদ নিয়াজির প্রতিনিধি হিসেবে আত্মসমর্পণের আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব নিয়ে আসেন। 

দুপুর ১২টার দিকে নাগরা তাকে নিয়ে নিয়াজির অফিসে পৌঁছান। এরপর শুরু হয় আত্মসমর্পণের শর্ত নিয়ে আলোচনা। ভারতীয় সেনাবাহিনীর ইস্টার্ন কমান্ডের চিফ অব স্টাফ মেজর জেনারেল জেএফআর জ্যাকব রাত একটার দিকে কলকাতা থেকে ঢাকায় আসেন। ততক্ষণে যৌথবাহিনী মিরপুর ব্রিজ পার হয়ে ঢাকায় প্রবেশ করতে শুরু করেছে। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর আত্মসমর্পণের খবর বিদেশী রেডিওতে প্রচারিত হওয়ার সাথে সাথে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সান্ধ্য আইন উপেক্ষা করে। 

এবং অবরুদ্ধ ঢাকা শহরের হাজার হাজার মানুষ মুক্তির আনন্দে রাজপথে নেমে আসে। বেলা ১১টার দিকে পুরান ঢাকার পাশাপাশি ধানমন্ডির রাজপথে আনন্দ মিছিল বের করে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রাজধানীর সর্বত্র হাজির হয় মুক্তিবাহিনীর সাহসী যোদ্ধারা। বেলা একটার পর আত্মসমর্পণের দলিল তৈরির জন্য পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সদর দফতরে বৈঠক হয়। একদিকে নিয়াজী, রাও ফরমান আলী ও জামশেদ, অন্যদিকে জ্যাকব ও নাগরা। 

নিয়াজী আত্মসমর্পণ দলিলে স্বাক্ষর করতে রাজি হন। সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল যে আত্মসমর্পণ নথিতে বিজয়ী যৌথ বাহিনীর প্রধান জগজিৎ সিং অরোরা এবং পরাজিত বাহিনীর পক্ষে লেফটেন্যান্ট জেনারেল এ কে নিয়াজি স্বাক্ষর করবেন।

বাংলাদেশের বিজয় দিবস বাংলা কত তারিখ ও সাল

অনেকে জানতে চায় বাংলাদেশের বিজয় দিবস বাংলা কত তারিখ ও সাল। এছাড়াও বাংলাদেশের অনেক পাবলিক পরীক্ষায় যেমন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশিকা পরীক্ষা এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রশ্ন করা হয় ১৬৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলা ভাষায় কোন তারিখ ছিল। তাই বাংলায় ১৬ই ডিসেম্বর ১৯৭১ তারিখ আমাদের প্রত্যেকের জানা উচিত। ১৬ই ডিসেম্বর ১৯৭১ যা বাংলায় ১ পৌষ মাস যখন পাকিস্তানি বাহিনী আত্মসমর্পণ করে।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস ও বিজয় দিবসের মধ্যে পার্থক্য কি

বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস এবং বিজয় দিবস বাংলাদেশের দুটি গুরুত্বপূর্ণ স্মরণীয় একটি দিন। তবে বর্তমানে জেনারেশন বাংলাদেশ স্বাধীনতা দিবস বিজয় দিবসের মধ্যে পার্থক্য কি তা সম্পর্কে দ্বিধাদ্বন্দে পড়ে যায়। বাংলাদেশের ইতিহাস সম্পর্কে সবাই জানা উচিত।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস
বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস প্রতি বছর ২৬ মার্চ পালিত হয়। এটি ১৯৭১ সালে সেই দিনটিকে স্মরণ করে যখন বাংলাদেশ পাকিস্তান থেকে তার স্বাধীনতা লাভ করে। ঘোষণাটি স্বায়ত্তশাসন এবং স্বাধীনতার জন্য ৯ মাস দীর্ঘ সংগ্রামের অনুসরণ করে, যা বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ নামে পরিচিত, যা ২৬ মার্চ, ১৯৭১ সালে শুরু হয়েছিল এবং ১৬ ডিসেম্বর, ১৯৭১ সালে শেষ হয়েছিল।

বিজয় দিবস
বাংলাদেশে প্রতি বছর ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস পালিত হয়। এটি সেই দিনটিকে চিহ্নিত করে যখন ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী যৌথ বাংলাদেশি ও ভারতীয় বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের অবসান ঘটায়। এই দিনটি পাকিস্তানি সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে বাঙালির বিজয় এবং একটি স্বাধীন জাতি হিসেবে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার প্রতীক।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস ২৬ মার্চ, ১৯৭১ তারিখে পাকিস্তান থেকে স্বাধীনতার ঘোষণাকে স্মরণ করে। যখন বিজয় দিবস ১৬ ডিসেম্বর, ১৯৭১-এ অর্জিত বিজয় উদযাপন করে, যা বাংলাদেশের স্বাধীনতার দিকে পরিচালিত করে। দুটি দিনই বাংলাদেশের ইতিহাস ও জাতীয় পরিচয়ে অপরিসীম তাৎপর্য বহন করে।

শেষ কথা 

প্রিয় পাঠক, আজকে আমরা আমাদের ঐতিহাসিক বিজয় দিবস সম্পর্কে আলোচনা করেছি। এই দিনটিতে আমরা শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করি, যাদের অক্লান্ত পরিশ্রম ও আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের এই স্বাধীনতা। অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশ। আমরা প্রতিজ্ঞা করি, তাদের রক্ত বৃথা যেতে দিব না। সবাই একসাথে হাতে হাত রেখে একটি গণতান্ত্রিক, সুশৃংখল বাংলাদেশ ও আইনের সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হিসেবে গড়ে তুলবো।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ড্রিমসসেফ আইটিির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url