সাইবার নিরাপত্তা কি - সাইবার নিরাপত্তা নীতিমালা ২০২৪


আপনারা সাইবার নিরাপত্তা বিষয়ে জানতে চাচ্ছেন? তাহলে আজকে আমাদের সকলের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় সাইবার ক্রাইম এবং এর নিরাপত্তা বিষয়ে আজকের আর্টিকেলটি পড়ার মাধ্যমে আমরা বিস্তারিত জেনে নিবো। আমরা যেহেতু অনলাইন নির্ভর তাই এ বিষয়ে সঠিক ধারণা থাকা উচিত।
সাইবার নিরাপত্তা কি - সাইবার নিরাপত্তা নীতিমালা ২০২৪
বিশেষ করে যাদের ইন্ডাস্ট্রি, ব্যাংক, ব্যক্তিগত কম্পিউটার এর সিকিউরিটি নিশ্চিত করতে হলে সাইবার নিরাপত্তা আগে নিশ্চিত করতে হবে। কিভাবে নিশ্চিত করবেন এবং সাইবার হামলা থেকে প্রতিরোধের উপায় কি জেনে নিন।

সাইবার নিরাপত্তা কি

সাইবার নিরাপত্তা হলো তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহারের সময় তথ্যের সুরক্ষা নিশ্চিত করা। সংক্ষেপে যেমন- ইন্টারনেট, কম্পিউটার, মোবাইল ডিভাইস, ডাটাবেস, নেটওয়ার্ক, সফটওয়্যার, ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস এবং তাদের তথ্যের সুরক্ষা সংক্রান্ত সমস্যাগুলির নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে আলোচনা করা। 

সাইবার নিরাপত্তা নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে বাস্তবায়নে এটি আমন্ত্রিত করা হয় যে কোন সাইবার হামলার বিষয়ে সচেতনতা বাড়ানোর জন্য এবং সে নিরাপত্তার প্রতি জনগণের সচেতনতা উন্নত করতে হবে। সাইবার নিরাপত্তা শব্দটির অর্থ হচ্ছে ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহারের প্রতিটি বিভাগের জন্য নিরাপত্তার বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে এবং সংক্রান্ত ঝুঁকিগুলির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে।

সাইবার ক্রাইম কত প্রকার

সাইবার ক্রাইম বলতে বুঝায় যা অনলাইন বা ইন্টারনেটের মাধ্যমে সংঘটিত অপরাধ হচ্ছে সাইবার ক্রাইম। সাইবার ক্রাইম মূলত বিভিন্ন রকমের হয়ে থাকে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু সাইবার ক্রাইম এর প্রকারভেদ সম্পর্কে আপনাদের মাঝে তুলে ধরা হলো।
  • Cyber Fraud
  • Hacking
  • Cyber Stalking
  • Theft
  • Identity Theft
  • Malicios Software
Cyber Fraud: ইন্টারনেটের মাধ্যমে যেসব অপরাধ করা হয় তা মূলত Cyber Fraud। এ ধরনের অপরাধ সাধারণত ব্যক্তির ব্যক্তিগত তথ্য, ব্যবসায়িক তথ্য, ব্যক্তিগত ছবি চুরি বা নষ্ট করার উদ্দেশ্যে এবং এসব তথ্য প্রকাশ করার মাধ্যমে অধিক আয় করার জন্য করে থাকেন।

Hacking: সবচেয়ে বেশি মানুষ ভুক্তভোগী হন হ্যাকিং এর মাধ্যমে। সাইবার অপরাধীরা হ্যাকিং এর মাধ্যমে ওয়েবসাইট, কম্পিউটার, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পাসওয়ার্ড নিয়ন্ত্রণ করে ফেলে এবং অবৈধ ভাবে ব্যবহার করে থাকেন। যা আপনি আমি সহজে বুঝতে পারবো না।

Cyber Stalking: সাইবার ট্রকিং অপরাধ হচ্ছে স্টেকার দ্বারা কোন ব্যক্তিকে হয়রানি করা। বর্তমানে কমবেশি সোশ্যাল মিডিয়াতে এই অপরাধ লক্ষ্য করা যায়। বিশেষ করে অনলাইন সম্পর্কে যাদের ধারণা কম তাদের ব্যক্তিগত তথ্য নিয়ে ব্ল্যাকমেইল করা।

Theft: এই অপরাধ হচ্ছে কপিরাইট আইন অমান্য করা। অর্থাৎ কোন ব্যক্তির ব্যক্তিগত জিনিস যেমন-মুভি, ছবি, গান ইত্যাদি পারমিশন ছাড়া কপি করা বা চুরি করা।

Identity Theft: বর্তমানে এই অপরাধ খুবই দেখা যায়। অপরাধীরা সেইসব ব্যক্তিকে টার্গেট করে যারা অনলাইনের মাধ্যমে অর্থ লেনদেন করে থাকে। যে সময় লেনদেন করে ঠিক সেই সময় যেসব উপায়ে লেনদেন করে সেসব মাধ্যমগুলির এক্সেস নিয়ে অর্থ আত্মসাৎ করে থাকেন। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় বিকাশ, নগদ ইত্যাদি।

Malicios Software: এই অপরাধ অত্যন্ত ভয়ানক। যা আমরা সাধারণ মানুষ কোনভাবেই বোঝা সম্ভব না। এটি মূলত সফটওয়্যার এর মাধ্যমে আপনার ব্যবহৃত জিনিসের এক্সেস নিয়ে নেয়।

সাইবার নিরাপত্তা আইন পাশ হয় কবে

১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ (বাসস): ডিজিটাল বা ইলেকট্রনিক মাধ্যমে সংঘটিত অপরাধগুলি সনাক্তকরণ, প্রতিরোধ, দমন এবং বিচার এবং শাস্তি নিশ্চিত করতে জাতীয় সংসদে 'সাইবার নিরাপত্তা বিল-২০২৩' পাস করেছে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ জাতীয় সংসদে বিলটি উত্থাপন করলে ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকুর সভাপতিত্বে কণ্ঠভোটে এটি পাস হয়। এর আগে বিলের ওপর আনা জনমত কমিটিতে পাঠানো হয় এবং সংশোধনী প্রস্তাব নিষ্পত্তি করা হয়।

সাইবার নিরাপত্তা আইন ২০২৩

সাইবার নিরাপত্তা আইন হলো ঐ আইনসমূহের সমষ্টি যা ইন্টারনেট, কম্পিউটার, ইনফরমেশন টেকনোলজি এবং ডাটা সুরক্ষা সম্পর্কে প্রশাসনিক, নৈতিক এবং ব্যবসায়িক সুরক্ষা সম্পর্কে নির্ধারিত করে। এই আইনের মাধ্যমে সাইবার অপরাধ সনাক্ত করা এবং তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। সাইবার নিরাপত্তা আইন বিভিন্ন ধরণের অনলাইন অপরাধ সংশোধন করে থাকে। 

যেমন- ডাটা ব্রিচ, ম্যালওয়্যার, ফিশিং, হ্যাকিং, সাইবার স্থলানিকরণ ইত্যাদির বিরুদ্ধে সাজা ও কার্যক্রম গ্রহণের বিষয়ে উল্লেখ করে। সাইবার নিরাপত্তা আইন সাইবার সুরক্ষা সংক্রান্ত নীতি, সুরক্ষা প্রদান, ডাটা গোপনীয়তা, কম্পিউটার ব্যবস্থা সুরক্ষা এবং অনুমতি নীতি নির্ধারণ করে। এই আইন সাইবার অপরাধের বিরুদ্ধে সাজা প্রদান করে এবং সাইবার নিরাপত্তা সংক্রান্ত সার্ভার নীতি এবং ব্যবস্থা নির্ধারণ করে।

সাইবার সিকিউরিটির অসুবিধা কি

সাইবার সিকিউরিটির অসুবিধা হলে অনেক ধরণের ক্ষতি হতে পারে। যেমন:

তথ্য চুরিঃ হ্যাকাররা অনুমতি ছাড়া অপ্রত্যাশিত সাইবার অ্যাক্সেস নিয়ে আপনার ব্যক্তিগত তথ্য, আর্থিক তথ্য, ব্যবসায়িক তথ্য, ই-মেইল ইত্যাদি চুরি করতে পারে। এতে আপনি অনেক ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারেন।

সংক্রমণ বৃদ্ধিঃ ভাইরাস, ম্যালওয়্যার, র্যানসমওয়্যার, স্পায়ওয়্যার ইত্যাদি সাইবার অ্যাট্যাক দ্বারা কম্পিউটারের ওয়ান সিস্টেম থেকে অন্যান্য সিস্টেমে ছড়িয়ে পড়ে এবং সংক্রমণ বাড়ায়।

নেটওয়ার্ক সেবাঃ কোম্পানির নেটওয়ার্কের প্রবেশ অনুমতি, নেটওয়ার্ক বাতিল করা এবং ব্যবহারকারীদের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করা হতে পারে।

দায়িত্বের সংকটঃ কোনও প্রতিষ্ঠান বা সরকারী সংস্থা একটি সাইবার হামলার কারণে নিজের তথ্য নিরাপত্তা বা গ্রাহকদের তথ্যের অবাধ অ্যাক্সেসের কারণে দোষী সাব্যস্ত হতে পারে।

অর্থনৈতিক ক্ষতিঃ সাইবার হামলা সহায়ক প্রতিষ্ঠানগুলির জন্য অর্থনৈতিক ক্ষতি হতে পারে। যেমন- টাকা লুট অথবা সাইবার অ্যাট্যাক দ্বারা প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠান কর্তৃক সরকারের অনুমতি বা স্থানীয় শাসন দফতরের নিকটতম সংস্থা দ্বারা নেতৃত্ব ও বিশ্বস্ততার ক্ষতি দেখা দিতে পারে।

রাজনৈতিক ক্ষতিঃ সাইবার অ্যাট্যাক রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরি করতে পারে এবং রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব বৃদ্ধি পেতে পারে এতে রাষ্ট্রের বিভিন্ন ক্ষতি হতে পারে।

সাইবার অপরাধ প্রতিরোধের উপায়

সাইবার অপরাধ প্রতিরোধ করতে হলে নিজেকে সচেতন থাকতে হবে। আপনি যখন আপনার ফোন অথবা কম্পিউটার ব্যবহার করবেন তখন অবশ্যই সাইবার সম্পর্কে আপনার যথেষ্ট জ্ঞান থাকা জরুরী। এতে আপনার ব্যক্তিগত তথ্য বা অন্যান্য তথ্য রক্ষা করতে সহজ হবে। এখন চলুন সাইবার অপরাধ থেকে নিজেকে রক্ষা করার জন্য বেশ কিছু পদক্ষেপ নিতে পারেন।
  • আপনার যেসব অনলাইন একাউন্ট রয়েছে সেসব একাউন্টে শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহার করুন।
  • অপরিচিত ইমেইল, টেক্সট মেসেজ এবং সোশ্যাল মিডিয়া মেসেজ থেকে সাবধান থাকুন।
  • ব্যবহৃত ডিভাইস আপ টু ডেট রাখা।
  • ম্যালওয়্যার বিভিন্ন ক্ষতি করে এমন সফটওয়্যার থেকে ডিভাইসগুলিকে রক্ষা করতে অ্যান্টি-ভাইরাস এবং অ্যান্টি-ম্যালওয়্যার সফ্টওয়্যার ব্যবহার করুন।
  • অজানা লিঙ্কে ক্লিক করা বা ফাইল ডাউনলোড করার বিষয়ে অত্যন্ত সতর্ক থাকুন।
  • ব্যবহৃত বাউজিং এবং ডেটা সুরক্ষিত করতে ভিপিএন ব্যবহার করুন।
  • পাবলিক ওয়াই-ফাই নেটওয়ার্ক ব্যবহার করার সময় সতর্ক থাকুন এবং পাবলিক নেটওয়ার্কে ব্যাঙ্কিং বা ব্যক্তিগত তথ্যের মতো একই রকম তথ্য অ্যাক্সেস করা থেকে বিরত থাকুন।
  • গুরুত্বপূর্ণ ফাইল এবং ডেটা নিয়মিত ব্যাক আপ করুন।
  • অপরিচিত ফোন কল, ইমেল বা বার্তা থেকে সাবধান থাকুন।

সাইবার নিরাপত্তার গুরুত্ব

সাইবার নিরাপত্তা আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ সমৃদ্ধ এবং প্রাসঙ্গিক তথ্য ও ডাটা সংরক্ষণের জন্য এটি নিশ্চিত করে যে, কারো ব্যক্তিগত তথ্য, কোম্পানির তথ্য এবং সরকারী তথ্য নিরাপত্তায় নিয়োজিত রয়েছে। এটি সংস্থা এবং ব্যক্তির দৈনন্দিন কাজের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, কারণ সাইবার হামলা থেকে তাদের তথ্য ও অন্যান্য সম্পদ বাঁচানোর জন্য নিরাপত্তা প্রদান করে থাকে। 

এটি অনুমানিত বা নিরাপদ সাইবার জটিলতা, সাইবার অপরাধ এবং অন্যান্য অনুপ্রাণিত প্রবেশ থেকে সুরক্ষা প্রদান করে। তাছাড়া, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলির জন্যও এটি গুরুত্বপূর্ণ, কারণ তাদের নেটওয়ার্ক এবং কোম্পিউটার সিস্টেমগুলি সাইবার অপরাধকে অব্যাহত রাখতে সাহায্য করে এবং কার্যকর দৃষ্টিভঙ্গিতে প্রতিষ্ঠানের গৌরবময় ভবিষ্যত নিশ্চিত করে।

শেষ কথা

প্রিয় পাঠক, বর্তমানে আমরা যেহেতু অনলাইন নির্ভর হয়ে গেছি সে ক্ষেত্রে সাইবার নিরাপত্তা আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এর ফলে আমরা আমাদের ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষিত রাখতে পারি। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে তা অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। তাই চেষ্টা করবেন সাইবার হামলা সম্পর্কে ধারণা রাখার। আর আমরা নিজেরাও কখনো এসব ঘৃণিত অপরাধে জড়াবো না।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ড্রিমসসেফ আইটিির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url