ইউরোপ ভিসা আবেদন ২০২৪

সরকারি ভাবে বিদেশ যাওয়ার উপায় - ২০২৪অনেকেই রয়েছে যাদের ব্যক্তিগত কাজ বা ব্যবসায়িক ও প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনীয় কাজের জন্য এক দেশ থেকে অন্য দেশে যেতে হয়। আর অন্য দেশে যাওয়ার জন্য সেদেশের অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজন পড়ে আর এই অনুমতি হচ্ছে ভিসা। তাই আজকে আমরা ভিসা সংক্রান্ত সকল তথ্য সম্পর্কে আপনাদের মাঝে আলোচনা করব।
ইউরোপ ভিসা আবেদন ২০২৪
ইউরোপ দেশগুলোতে বৈধভাবে যাওয়ার জন্য কোন ভিসার জন্য আবেদন করবেন? কি কি পদ্ধতি বা নিয়ম অনুসরণ করতে হয় এবং কি কি গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্রের প্রয়োজন পড়ে তার সবকিছুর উত্তর নিয়ে এসেছে ড্রিমসসেফ আইটি। বিস্তারিত জানতে সাথেই থাকুন।

ভিসা কত প্রকার কি কি?

Visa এর পূর্ণরূপ হচ্ছে Visitor International Stay Admission। ভিসা একটি অনুমতি পত্র যা একটি দেশের নাগরিককে সে দেশে প্রবেশ বা বসবাস করার জন্য দিয়ে থাকে। ভিসা ছাড়া কোন দেশে প্রবেশ করা অবৈধ বা অভিবাসন হিসেবে ধরা হয়। ভিসা প্রদান করা হয় সাধারণত পাসপোর্ট বা ট্রাভেল পারমিটের মাধ্যমে। আর এই পাসপোর্ট ট্রাভেল পারমিট এর পাতায় লিখা, স্টিকার লাগানোর বা সিল দেওয়ার মাধ্যমে ভিসা মঞ্জুর করা হয়। এখন প্রশ্ন হচ্ছে ভিসা কত প্রকার ও কি কি?
ভিসার নিয়মকানুন অনুযায়ী বাংলাদেশ সরকার অন্য দেশের নাগরিকদের জন্য ৩৩ ধরনের ভিসা প্রদান করে থাকেন। ভিসা প্রধানত ২ ধরনের।
  • ইমিগ্রান্ট ভিসা।
  • নন ইমিগ্রান্ট ভিসা।
ইমিগ্রান্ট ভিসাঃ ইমিগ্রান্ট ভিসা হচ্ছে কোন নাগরিক যদি নিজ দেশ ছেড়ে পার্মানেন্টভাবে অন্য দেশে বসবাস করার জন্য যায় তার জন্য প্রযোজ্য।

নন ইমিগ্রান্ট ভিসাঃ নন ইমিগ্রান্ট ভিসা হচ্ছে কোন নাগরিক যদি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য নিজ দেশ ছেড়ে অন্য দেশে যেতে চায় তার জন্য এই ভিসা প্রযোজ্য।

উপরিউক্ত এই ২ ধরনের ভিসা ছাড়াও আরো ৬ ধরনের আলাদা শ্রেণীর ভিসা রয়েছে। যেমনঃ
  • স্টুডেন্ট ভিসা।
  • টুরিস্ট ভিসা।
  • বিজনেস ভিসা।
  • মেডিকেল ভিসা।
  • ট্রানজিট ভিসা।
  • এরাইভাল ভিসা।
স্টুডেন্ট ভিসাঃ স্টুডেন্ট ভিসা বলতে যারা পড়াশোনা করার জন্য নিজ দেশ ছেড়ে অন্য দেশে পারি জমায়।

টুরিস্ট ভিসাঃ যেসব নাগরিক বিভিন্ন দেশে কিছু সময়ের জন্য ভ্রমণের উদ্দেশ্যে যেতে চায় তাদের জন্য এ ভিসা দেয়া হয়। এ ভিসা প্রদান করা হয় অল্প সময়ের জন্য প্রযোজ্য।

বিজনেস ভিসাঃ ব্যবসায়িক পণ্য আদান-প্রদানের ক্ষেত্রে এবং ব্যবসায়িক সংক্রান্ত কাজের জন্য এ বিজনেস ভিসা দেয়া হয়ে থাকে।

মেডিকেল ভিসাঃ মেডিকেল ভিসা সাধারণত যাদের উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজন পড়ে তারাই মেডিকেল ভিসার জন্য আবেদন করতে পারে।

ট্রানজিট ভিসাঃ ট্র্যানজিট ভিসা সাধারণত একটি দেশ থেকে অন্য দেশে যাওয়ার সময় তৃতীয় কোন দেশে ভ্রমণ করার প্রয়োজন পড়ে তখন এ ভিসার পারমিশন দেওয়া হয়। এর ভিসার মেয়াদ খুব কম সময়ের জন্য দেওয়া হয়।

এরাইভাল ভিসাঃ এরাইভাল ভিসা সাধারণত বিদেশের বিমানবন্দরে প্রবেশ করার পর দিয়ে থাকে। এ ভিসার জন্য নিয়ম কানুন সম্পর্কে অবগত থাকতে হয়।

ভিসা করতে কি কি লাগে

ভিসার জন্য কি কি কাগজপত্র প্রয়োজন হয় এ সম্পর্কে কিন্তু সবাই জানেনা বিশেষ করে যারা নতুন ভিসার জন্য আবেদন করতে চায়। আমাদের আজকের আর্টিকেলটি তাদের জন্য। তাহলে চলুন ভিসা আবেদন করার জন্য যেসব প্রয়োজনীয় কাগজপত্র লাগে জেনে নেই।
  • বৈধ পাসপোর্ট (কমপক্ষে ছয় মাস মেয়াদি হতে হবে)
  • জাতীয় পরিচয় পত্র।
  • ভিসার আবেদনপত্র।
  • আপনি যে কাজের জন্য যেতে চান তার প্রমাণ পত্র।
  • মেডিকেল সার্টিফিকেট।
  • পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট।
  • জন্ম নিবন্ধন সনদ।
  • ব্যাংক স্টেটমেন্ট ইত্যাদি।
  • স্টুডেন্ট ভিসার জন্য শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ, ভাষা দক্ষতা ইত্যাদি প্রয়োজন।
  • ভিসার জন্য চিকিৎসা সংক্রান্ত কাগজপত্র লাগতে পারে।
  • ওয়ার্ক পারমিটের জন্য সে কোম্পানির চুক্তিপত্র লাগবে।
  • ভিজিট ভিসার জন্য ভ্রমণের উদ্দেশ্য ইত্যাদি ডকুমেন্ট লাগতে পারে।
  • করনা টিকা সনদ ( প্রয়োজন পড়তে পারে নাও পড়তে পারে)
উপরিউক্ত তথ্য ছাড়াও ভিসা আবেদনের জন্য ভিসার ধরণ ও ভ্রমণের উদ্দেশ্যের উপর নির্ভর করে পরিবর্তন হতে পারে।

ইউরোপ ভিসা আবেদন ২০২৪

আমরা খুব সহজেই বিভিন্ন দেশে কাজের তাগিদে বা ভ্রমণের উদ্দেশ্যে যেতে পারি। কিন্তু ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্যকৃত যেসব দেশগুলো রয়েছে সেসব দেশে যাওয়ার জন্য নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম অনুসরণ করতে হয় বা তাদের শর্ত পূরণের মাধ্যমে যাওয়া সম্ভব হয়। ইউরোপে যেসব দেশগুলো রয়েছে তার মধ্যে যুক্তরাজ্য, ডেনমার্ক, আয়ারল্যান্ড ছাড়া ভিসার আবেদনের জন্য নিচের পদ্ধতি গুলো প্রযোজ্য।

গ্রীন কার্ডঃ বিভিন্ন দেশের উচ্চ শিক্ষিত নাগরিক ও যোগ্যতা সম্পন্ন কর্মী বা গবেষকদের ইউরোপ দেশগুলোতে প্রবেশের ক্ষেত্রে গ্রীন কার্ড প্রদান করা হয়। সেক্ষেত্রে কিছু শর্ত অবশ্যই পূরণ করতে হবে তাছাড়া গ্রীন কার্ড পাওয়া থেকে বঞ্চিত হবে। তা হলো;
  • উচ্চ শিক্ষাগত যোগ্যতার সার্টিফিকেট প্রদান করতে হবে।
  • কাজের চুক্তিপত্র বা কাজের প্রস্তাব থাকলে তার প্রমাণ দেখাতে হবে।
  • গ্রীন কার্ড আবেদনকারীকে উচ্চ বেতনধারী হতে হবে।
  • গ্রীন কার্ড আবেদনের জন্য সে দেশের অভিবাসন বিষয়ক কার্যালয়ে আবেদনটি জমা দিতে হবে।
স্টুডেন্ট ভিসার ক্ষেত্রেঃ ইউরোপ দেশগুলোর কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করার জন্য এই ভিসার জন্য আবেদন করতে পারবেন। এক্ষেত্রে আবেদনকারীকে যেসব পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে তা হল;
  • আপনাকে সর্বপ্রথম দেশ, বিশ্ববিদ্যালয়, এবং কোর্স নির্বাচন করতে হবে। যে বিশ্ববিদ্যালয়ে স্টাডি করার জন্য আবেদন করতে চাচ্ছেন সে বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট থেকে ভর্তির প্রয়োজনীয় তথ্য ও আবেদন প্রক্রিয়া সম্পর্কে জেনে নিতে হবে।
  • আপনাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে অনলাইনে আবেদন করতে হবে।
  • প্রয়োজনীয় কাগজপত্র যেমন-শিক্ষাগত সার্টিফিকেট, ট্রান্সস্কিপ্ট, আইএলটিএস ইত্যাদি জমা দিতে হবে।
  • এরপর আপনি ভর্তির জন্য কনফার্ম হলে ভর্তি নিশ্চিতকরণ অ্যাডমিশন লেটার পাবেন।
  • আপনি যে দেশে যাবেন সে দেশের দূতাবাস বা কনস্যুলেটে স্টুডেন্ট ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে।
এছাড়াও মৌসুমী কর্মী হিসেবে বা গবেষকদের জন্য ইউরোপের দেশে আবেদন করতে পারেন। তার জন্য সে দেশের শর্ত অনুযায়ী সমস্ত ডকুমেন্ট দিয়ে শর্তসাপেক্ষে আবেদনের মাধ্যমে যেতে পারবেন।

অনলাইনে ভিসা আবেদন

অনলাইনে ভিসা আবেদন করার নিয়মগুলো বিভিন্ন দেশের ভিসা প্রক্রিয়া অনুযায়ী পরিবর্তিত হতে পারে। কারণ প্রতিটি দেশের ভিসা নীতি এবং আবেদনের পদ্ধতি ভিন্ন হতে পারে। তবে অনলাইনে ভিসা আবেদনের পদ্ধতি সাধারণত নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলির অনুসরণের মাধ্যমে সম্পন্ন করা হয়।

অফিসিয়াল ওয়েবসাইট সিলেক্ট করুনঃ সঠিকভাবে ও সুরক্ষিত অনলাইন ভিসা আবেদন করার জন্য আপনাকে প্রথমে সে দেশের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট এ ভিসা আবেদন পোর্টালে যেতে হবে।

ভিসার ধরণ নির্বাচনঃ প্রথমে আপনাকে ভিসা আবেদনের সাথে যে ধরণের ভিসা প্রযোজ্য তা নির্ধারণ করতে হবে। যেমনঃ টুরিস্ট, শিক্ষা, ব্যবসা, ব্যক্তিগতকাজ বা অন্যান্য যেকোন ধরনের ভিসা হতে পারে।

আবেদন ফরম পূরণঃ অনলাইনে ভিসা আবেদন করার জন্য সম্প্রতি অনেক দেশে অনলাইনে সে দেশের আবেদনের ফরম দেওয়া থাকে। এই ফরমগুলিতে আপনার ব্যক্তিগত তথ্য ও পাসপোর্ট সংক্রান্ত তথ্য যেমন- নাম, ঠিকানা, জন্ম তারিখ,পাসপোর্ট নম্বর ইত্যাদি প্রদান করতে হবে।

আবেদন ফি পরিশোধঃ আপনারা জেনে থাকবেন অনেক দেশে ভিসা আবেদনের ফি পরিশোধ করতে হয়। এই ফি অনলাইনে পরিশোধ করতে হতে পারে। আপনার ব্যাংক কার্ড অথবা অন্য অনুমোদিত পেমেন্ট মেথড ব্যবহার করে ফি পরিশোধ করতে হবে।

সাক্ষাৎকার সময় নির্ধারণঃ অনেক দেশে ভিসা আবেদনকারীদের জন্য সাক্ষাৎকারের সময় নির্ধারণ করা হয়। আপনার সাক্ষাৎকারের তারিখ এবং স্থান নির্ধারণ করুন। এরপর অনলাইনে একটি অনুষ্ঠানের সময় নির্ধারণ করা হয় যেখানে আপনাকে ফিজিক্যালি উপস্থিত থাকতে হবে।

প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমাঃ অনলাইনে আবেদনের সময় প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সঠিকভাবে আপলোড করতে হয়। আপনার পাসপোর্টের স্ক্যানকৃত ছবি, আবেদনকারীর ছবি, আবেদনকারীর যে কোন প্রযোজনীয় কাগজপত্র। যেমন- আবেদনপত্র, ব্যাংক স্টেটমেন্ট ইত্যাদি)।

আবেদন জমা দিনঃ আবেদন ফরম পূরণ করার পর এবং সমস্ত প্রয়োজনীয় তথ্য যাচাই-বাছাই করার পর সবকিছু ঠিক থাকলে আবেদন পত্র সাবমিট করতে হবে।

শেষ কথা

প্রিয় পাঠক, আপনারা উপরের সম্পূর্ণ লেখা পড়ে বুঝতে পেরেছেন যে আপনি যে দেশে ভিসার জন্য আবেদন করবেন সেদেশের নিয়ম অনুযায়ী আবেদন করতে হবে। অনলাইনে আবেদন করার জন্য আপনাকে সে দেশের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটের ভিসা আবেদন পোর্টালের মাধ্যমে আবেদন করতে হবে। যখন ভিসার জন্য আবেদন করবেন অবশ্যই সঠিক নিয়মে যাচাই-বাছাই করার মাধ্যমে আবেদন করার চেষ্টা করবেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ড্রিমসসেফ আইটিির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url